রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে গিয়ে প্রধান অতিথির সম্মাননা প্রত্যাখ্যান করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। আজ শনিবার দুপুরে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মঞ্চে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন তথ্য উপদেষ্টা। বক্তব্য শেষে এক শিক্ষার্থী দাঁড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি কমলেশ রায় এবং কলা অনুষদের ডিন শফিক আশরাফকে সম্মাননা স্মারক দেওয়ার বিরোধিতা করেন। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডে জড়িত দুই শিক্ষককে অনুষ্ঠান মঞ্চে সম্মাননা দেওয়ায় শিক্ষার্থীদের আপত্তির মুখে সম্মাননা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান নাহিদ ইসলাম।
ওই শিক্ষার্থী বলেন, ‘যারা স্বৈরাচারের সাহায্য করেছে, তাদেরকে সম্মাননা স্মারক দেওয়াটা আমরা মানতে পারি না। যাদের আজ সম্মাননা দেওয়া হলো, তাদের একজন আন্দোলনে হামলাকারীদের উসকানিদাতা স্বৈরাচারের দোসর বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি কমলেশ রায়। অন্যজন কলা অনুষদের ডিন শফিক আশরাফ আবু সাঈদের মৃত্যুর পর বিতর্কিত কলাম লিখেছেন। তাদের সম্মাননা দেওয়া মানে আবু সাঈদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা।’
পরে তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম সম্মাননা স্মারকটি প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দেন। এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘রাষ্ট্রের প্রতিটি কাঠামো থেকে ব্যবস্থা বিলোপ করা হবে। আপনারা যে অভিযোগটি তুলেছেন, সে বিষয়ে আমি জানতাম না। বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য যেন আপনাদের অভিযোগটি গুরুত্বের সঙ্গে দেখেন। ফ্যাসিবাদমুক্ত বেরোবিতে এসে যেদিন আপনাদের দাবি পূর্ণ করতে পারব, সেদিনে প্রকৃত সম্মাননা গ্রহণ করব।’
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আবু সাঈদ মাঠ ছাড়েনি। সে কথা রেখে প্রতিরোধ করেছিল। এখন আমরা যেন আমাদের কথা রাখি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফ্যাসিস্ট কাঠামো ছিল বলেই ছাত্রলীগ এত ক্ষমতা পেয়েছিল। এর জন্য দায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীরাও। আমাদের এই ফ্যাসিস্ট কাঠামোকে ভেঙে দিতে হবে। ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেওয়ার জন্য সরকারকে প্রভাবিত করব অন্তবর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত দুই মাসে আমরা প্রত্যাশিত কাজগুলো করতে পারিনি। গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে রাষ্ট্রযন্ত্র এখনো ধারণ করতে পারেনি। যদি আমরা কাঙ্ক্ষিত সংস্কার করে ফ্যাসিস্ট কাঠামোকে বিলুপ্ত করতে না পারি তাহলে উপদেষ্টা পরিষদ থেকে আবার জনগণের মাঝে ফিরে এসে বৈপ্লবিক পন্থায় আমাদের দাবি আদায় করব।’ এর আগে সকালে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর র্যালিতে অংশগ্রহণ ও নবনির্মিত ফটক উদ্বোধন করেন উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।
এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান, শহীদ আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো. মোরশেদ হোসেন, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মিজানুর রহমান, বিজনেস স্টাডিজ অনষদের ডিন প্রফেসর মো. ফেরদৌস রহমান, জীব ও ভূ-বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. মো. এমদাদুল হক। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর ড. মো. তাজুল ইসলাম।