নিজস্ব সংবাদদাতা
তৃণমূলের ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে আসা নারায়ণগঞ্জের যুবদলের আলোচিত মুখ মশিউর রহমান রনি। মাঠ কাঁপানো ছাত্রদলের নেতা থেকে বর্তমান যুবদলের নেতা রনির ঝুলিতে রয়েছে লড়াই, সংগ্রাম, হামলা, মামলা,জেল খাটার হাজারো অভিজ্ঞতা।আছে আওয়ামী লীগ সরকারের দ্বারা নির্মম নির্যাতিত শিকারের ঘটনা তবুও বিন্দু পরিমাণ কমেনি নিজের দল বিএনপির প্রতি ভালোবাসা।
নারায়ণগঞ্জের ছাত্র রাজনীতিতে সবচেয়ে আলোচিত মুখ মশিউর রহমান রনি।রয়েছে তার ঝুড়িতে আলোচনা ও সমালোচনা দুইই। ছাত্র রাজনীতিতে থাকা অবস্থায় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ঝাঁঝালো বক্তব্যের কারনে সমালোচনার থেকে সবচেয়ে বেশিই আলোচনায় আসেন এই রনি।কখনো বোরকা শামীম, কখনো পুলিশের পোষাক খুলে ফেলা নিয়ে বক্তব্য দিতে গিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছিলেন এ রনি।খেতে হয়েছে পুলিশের হামলা, মামলা ও জেল।
যখন আওয়ামী লীগের হামলা,মামলা ও জেল খাটার ভয়ে বিএনপির বড় বড় নেতারা ইঁদুরের গর্তে পলায়ন করেছিলো তখন রনি নারায়ণগঞ্জের মাঠ কাঁপিয়েছিলো।ঝাঁঝালো বক্তব্যের কারনে অনেক সময় হামলা, মামলা ও জেল জুলুমের শিকার হয়েছে তবুও দমে যায়নি এই রনি।প্রতিটি প্রতিকূলে নেতাকর্মীদের সাহস জুগিয়েছে দলের দুর্দিন গিয়ে একদিন সুদিন আসবে সেই আশ্বাস দিয়ে।
ওয়ার্ড পর্যায় থেকে উঠে আসা এই ছাত্রদল নেতা রনির নেতৃত্বে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা সরকার বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখে এসেছে। রাজধানী ঢাকা কিংবা নিজ জেলা নারায়ণগঞ্জ- সবখানেই জেলা ছাত্রদলের ছিলো উজ্জ্বল পদচারনা। শত শত নেতাকর্মী নিয়ে রনির মিছিল প্রতিপক্ষ শিবিরে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছে। এ জন্য তাকে মাশুলও দিতে হয়েছে সবচেয়ে বেশী। পুলিশের মামলা হামলা আর নির্যাতনের শিকার হয়েও রাজপথকে ভুলে যাননি এই লড়াকু ছাত্রনেতা। বারবার কারাবরণ করেও আবার বীরদর্পে ফিরে এসেছেন তার প্রিয় রাজপথে। সর্বশেষে জেলা ছাত্রদলের একটি পূর্নাঙ্গ কমিটি তৈরী করে দিয়ে ছাত্র রাজনীতি থেকে হাসি মুখে বিদায় নিয়েছেন এই উদীয়মান রাজনীতিবীদ।
দীর্ঘ ২২ বছরের ছাত্র রাজনীতিতে থেকে ২০২২ সালে ছাত্রদলের সভাপতির পদ থেকে জেলা যুবদলের সদস্য সচিব নির্বাচিত হয়ে ছাত্রদলের রাজনীতির ইতি টানে রনি। ২০১৮ সালের ৫ জুন ছাত্রলের যুগ্ম আহবায়ক মশিউর রহমান রনিকে সভাপতি এবং খায়রুল ইসলাম সজিবকে সাধারণ সম্পাদক করে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের ১২ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষনা করা হয়েছিলো।সেই সময় থেকেই তৃণমূলকে সংগঠিত করে ছাত্রদলের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে থাকেন তিনি। কিন্তু তার এই পথচলা মোটেই মসৃন ছিলো না। তার নিজ দল থেকেই পদে পদে বাঁধার সম্মুখীন হতে থাকে। একেবারে অনভিজ্ঞ সাধারণ সম্পাদক নিয়ে এই কঠিন পথ পাড়ি দেওয়া ছিলো অসম্ভব কিন্তু মশিউর রহমান রনি পৌঁছে গেছেন অনন্য এক উচ্চতায়। সেই সাথে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলকেও পৌঁছে দিয়েছেন সফলতার শীর্ষে। শত প্রতিকূলতা পেরিয়ে জেলা ছাত্রদলের ইউনিট কমিটিগুলো ঘোষনা করেছেন রনি। যা আগে কোন জেলা কমিটি করে দেখাতে পারেনি। তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত ছড়িয়ে দিয়েছেন ছাত্রদলের নেতৃত্ব। আর এসবের পুরো কৃতিত্বই সভাপতি রনির প্রাপ্য বলে মনে করেন ছাত্রদল নেতাকর্মীরা।সেই কারনেই নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের ইতিহাসে অন্যতম সফল সভাপতি হিসেবে মশিউর রহমান রনির নাম চিরভাস্বর হয়ে থাকবে।
আমাদের জনদর্পণ এর প্রতিনিধির সাথে বর্তমান নারায়ণগঞ্জের যুবদলের রাজনীতির সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হয় এ নেতার সাথে।
বর্তমান সরকারের বিষয়ে রনি বলেন, বর্তমানে আমরা ড. ইউনুসের নেতৃত্বে আছি, উনাকে আমরা সহযোগীতা করবো। যে কোন সময় উনার নেতৃত্বে আমাদের কাজ করবো। উনি যে দিক নির্দেশনা দিবে সে দিক নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কাজ করবো। আমরা ১৬ বছর কষ্ট করেছি, প্রয়োজনে আরও ১০ বছর কষ্ট করবো। তারপরও এই বাংলাদেশ থেকে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিকলীগ, কৃষকলীগকে ধ্বংস করতে হবে। যতদিন এরা থাকবে ততদিন বাংলাদেশে শান্তি থাকবে না। বাংলাদেশ অসুস্থ, তাই দেশনেত্রী খালেদা জিয়া অসুস্থ, তারেক রহমান অসুস্থ। যেদিন দেশ সুস্থ হবে, সেদিন দেখবেন খালেদা জিয়া সুস্থ হয়ে গেছে, তারেক রহমানও দেশে আসবে। দেশ নায়ক তারেক রহমানকে দেশে আনার জন্য আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে ড. ইউনুসকে সহযোগীতা করবো। পুলিশ সেনাবাহিনী আমাদের কাছে সহযোগীতা চাইলে আমরা তাদের সহযোগীতা করবো।
গত ৫ই আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে এখন পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জে বিভিন্ন বিএনপির নেতাদের চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি,ভূমিদস্যু, ডাকাতির সাথে সম্পৃক্তাতার অভিযোগ উঠলেও মশিউর রহমান রনির বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ উঠেনি এর কারন জানতে চাইলে তিনি জানান, ৫ আগষ্টের পর থেকে ভূমিদস্যু, সন্ত্রাসী ,চাঁদাবাজি,ডাকাতি সহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের শেল্টার দিচ্ছে এই ধরনের নানা অভিযোগ নারায়ণগঞ্জে বিএনপির অনেক নেতাকর্মীর নামে উঠে আসলেও এখন পর্যন্ত আমার নামে আসেনি কোন অভিযোগ এর একটাই কারন শুধু আমি রনি না, যুবদলের প্রতিটি নেতাকর্মীর প্রতি আমাদের দেশ নায়ক তারেক রহমানের নির্দেশ রয়েছে কেউ যেন লুটপাট, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী ও ডাকাতির কোন কর্মকান্ডে লিপ্ত না হয়।যারা তাঁর নির্দেশ অমান্য করবে তারা আমাদের দলের কেউ হতে পারে না, তারা শহীদ রাষ্ট্রপতির আদর্শের কেউ হতে পারে না। যারা তারেক রহমানের নেতৃত্বকে বিশ্বাস করে যারা তার আদর্শ মানেন, তারা এসব কর্মকান্ড থেকে দূরে থাকবেন।
তিনি আরো বলেন,আর তাছাড়া কোথাও আমার নাম ব্যবহার করলে বা বিসিকে ঝুট সেক্টরেও যদি কেউ চাঁদাবাজি বা সন্ত্রাসী করতে গেয়ে আমার নাম ব্যবহার করে তাহকে তাকে সাথে সাথে বেঁধে যেন আমাকে ও প্রশাসনকে জানানো হয় সেটা বলা আছে।সেই কারনেই হয়তো কোথাও আমার নাম আসেনি।কারন অন্যায়কে আমরা সমর্থন করি না।বিএনপিকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে পতন করার জন্য নিজের জীবন বাজি রেখে রাজপথে ছিলাম, তেমনি বিএনপিকে রক্ষা করার জন্য তারেক রহমান যেকোন কর্মসূচিতে আমরা রাজপথে থাকবো।
দলমত নির্বিশেষে ক্ষতিগ্রস্ত সকলের পাশে থেকেই কাজ করছে বলে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন,গত ৫ ও ৬ আগষ্ট যে সকল এলাকায় এবং যাদের বাসায় লুটপাট, অগ্নি সংযোগ করা হয়েছিলো দল মত নির্বিশেষে প্রত্যেকের পাশে গিয়েই আমি দাঁড়িয়েছি ।তার একটাই কারন যাতে কেউ বলতে না পারে ছাত্রদল ও যুবদল কারো নাম ভাঙ্গিয়ে কোন অন্যায় করতাছে।আমি স্বচ্ছ রাজনীতিতে বিশ্বাসী। আমাদের দলের কর্মীরাও স্বচ্ছ রাজনীতিতে বিশ্বাসী। দলের দুর্দিনে যারা ছিলো না তারা এখন এসে অন্যায় করবে তা কোনভাবেই আমরা মেনে নিবে না। আর নতুন করে আমরা দলে কাউকে প্রবেশ করতেও দিবো না। তাই সকলকেই কড়াভাবে বলা আছে যেই অন্যা করবে তার বিরুদ্ধেই আমরা ব্যবস্থা নিবো।
যারা এলাকায় এলাকায় ক্ষমতার জন্য আধিপত্য বিস্তারে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে ও করতাছে তাদেরকে হুশিয়ারী দিয়ে রনি বলেন, যারা নিজ দলের দুর্নাম করার চেষ্টা করতাছে তাদেরকে কঠোর হুশিয়ারী দেওয়া হয়েছে।তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই কেন্দ্র ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর এখন যারা এলাকা আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন এলাকায় ভূমিদস্যু, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, ঝুট ব্যবসায় দখল এসকল কাজ করছে তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না । যারা নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে আওয়ামী লীগের গুণ্ডাপাণ্ডা পালা দরকার এবং তাদের দিয়ে কাজ করছে কেন্দ্র থেকেই তাদের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।এছাড়া নিজ দলের কেউ কারো বিরুদ্ধে মামলা করার চেষ্টা করলেও তাদের বিরুদ্ধেও কেন্দ্রীয়ভাবে আমরা ব্যবস্থা নিবো।
ছাত্র আন্দোলনকে সমর্থন করতে গিয়ে খেতে হয়েছে ৩০ এর অধিক মামলা সেটাও উল্লেখ করে রনি বলেন, গত ১৮ জুলাই থেকে নারায়ণগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে সমর্থন জানাতে গিয়ে স্বৈরাচারী আওয়ামীল লীগ সরকারের দ্বারা জেলার ৩১টি মামলাতেই আমার নাম ছিলো। এই ৩১ টা মামলার আমাদের থেকে একটা প্রতিবেদন চেয়েছিলো নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার সেটারও প্রতিবেদন দিয়ে দিয়েছি আমরা। এর আগেও বিভিন্ন রাজনৈতিক ৬৪টা মামলা চলমান আছে আমার বিরুদ্ধে । ছাত্র আন্দোলনে আমাদের নারায়ণগঞ্জে যুবদলের ৩ জন নিহত হয়েছে এবং আহত হয়েছে প্রায় ১৫০ জন। আমি প্রতিনিয়ত আহত ও নিহত পরিবারগুলোর সাথে যোগাযোগ করছি এবং বিভিন্ন সহযোগিতা করছে।আমাদের নেতা তারেক রহমান নিহত ও আহত পরিবারদের মাঝে আর্থিক সহযোগিতাও করেছে তা আমরা তাদের পৌঁছিয়ে দিয়েছি।
১ সেপ্টেম্বর জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ৪৬ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বাতিলের কারন কি জানিতে চাইলে রনি জানান, বর্তমান বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিপর্যয় বন্যা চলতেছে আপনেরা জানেন। তাই আমাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে যে টাকা খরচ হবে তা বন্যার্তদের সাহায্যে করতে বলা হয়েছে। আমাদের দেশ নায়ক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজনের নারায়ণগঞ্জ যুবদলের সমস্ত অর্থায়ন দিয়ে ফেনীর সদর উপজেলার বালিগাঁও ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্ত ১২ শ বন্যার্ত পরিবারের মাঝে গিয়ে আমরা ত্রান বিতরণ করে এসেছি।