
ভূ-স্বর্গ কাশ্মিরের পেহেলগামে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলায় বেঁচে ফেরারা এখনও ভুলতে পারছে না সেই নৃশংসতা। চোখের সামনে ভেসে উঠছে সেদিনের মৃত্যুর মিছিল। সৌভাগ্যবশত নিজে বাঁচতে পারলেও চোখের সামনেই দেখেছেন প্রিয়জনের মৃত্যু। তাই কেউ কেউ ভেঙে পড়েছেন শারীরিক ও মানসিকভাবে। পেহেলগামের আনন্দভ্রমণ তাদের কাছে এখন দুঃস্বপ্ন।
যেমন মহারাষ্ট্রের নাগপুরের বাসিন্দা সিমরান রূপচাদনির পুরো পরিবার ঘুরতে গিয়েছিলেন কাশ্মির। মুহূর্তেই তাদের সুখস্মৃতি আতঙ্কে পরিণত হয়। বৈসারণে পর্যটকদের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি শুরু হলে জীবন বাঁচাতে তারা দৌড় দেন জঙ্গলের দিকে। ধাক্কাধাক্কিতে চারবার মাটিতে পড়ে যান সিমরান। এতেই মচকে যায় তার পা।
পরিবার নিয়ে নিজ ঘরে ফিরতে পেরে যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলেন এই পরিবারের কর্তা তিলক রূপচাদনি। যেটিকে ঈশ্বরের আশীর্বাদ হিসেবে দেখছেন তিনি।
তিলক রূপচাদনি বললেন, গুলির শব্দ শোনার সাথে সাথে সবাই একসাথে জঙ্গলের দিকে দৌড়াতে থাকি। ছেলে ও স্ত্রীকে আমি সামনের দিকে ঠেলে দিচ্ছিলাম যেন দ্রুত আমরা ওই জায়গা থেকে সরে যেতে পারি। পড়ে গিয়ে পা মচকে যায় সিমরানের। এরপরও সে দৌড়ানো বন্ধ করেনি।
তিলক রূপচাদনির পরিবারের সদস্যরা জীবিত বাড়ি ফিরলেও সে সৌভাগ্য হয়নি পেহেলগামের স্থানীয় বাসিন্দা স্বার্থক নাথানির। সন্ত্রাসীদের গুলিতে চোখের পলকে মৃত্যু হয় তার ভাই ও চাচার।
স্বার্থক নাথানি বলেছেন, আমাদের ওপর হামলা করা হয়েছে বুঝা মাত্র দৌড়াতে শুরু করি। কিন্তু আমার ভাই ও চাচা পিছনে পড়ে যায়। চাচাকে আগেই মেরে ফেলে। ভাইকে প্রথমে কিছু প্রশ্ন করে হামলাকারীরা। এরপর তাকে-ও গুলি করে মেরে ফেলে।
এদিকে, অল্পের জন্য বেঁচে গেছেন পেহেলগাম ঘুরতে যাওয়া আরেক পর্যটক সুধাস কানোত। ঘোড়ায় চড়ে নৈস্বর্গিক সৌন্দর্য উপভোগের একসময় দুর্ঘটনাবশত ঘোড়া থেকে পরে যান তিনি ও তার স্ত্রী। সেদিনের মতো ভ্রমণ সংক্ষিপ্ত করে পথ ধরেন হোটেলের। তিনি যখন ওই এলাকা ছাড়েন ঠিক তখনই পর্যটকদের ওপর শুরু হয় সন্ত্রাসীদের গুলিবর্ষণ।
সুধাস কানোত বলেছেন, ঘোরাঘুরি শেষে যখন হোটেলে ফিরছিলাম, রাস্তায় অনেক সেনাবাহিনীর গাড়ি দেখে ভড়কে গিয়েছিলাম। ড্রাইভার সতর্ক করলেন দ্রুত যেন এখান থেকে চলে যাই। কিছু চিন্তা না করে তখনই পেহেলগাম থেকে শ্রীনগর চলে আসি। ভাবতেও পারছি না আর একটু দেরি হলে কী হতে পারতো।
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) কাশ্মিরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হয়েছেন ২৬ জন।