
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি : গেলো ৫ আগস্ট পরবর্তী দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে রাজধানীর পাশের গুরুত্বপূর্ণ নারায়ণগঞ্জ জেলার শিল্প কারখানা ও সামগ্রিক পরিবেশ স্থিতিশীল রাখতে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর ভূমিকায় সন্তুষ্ট নগরবাসী। শিল্প-কারখানাকে ঘিরে বিশৃঙ্খলা রোধ করে অর্থনীতির চাকা সচল রাখার ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর নিরলস প্রচেষ্টায় ব্যবসায়ীরাও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। যদিও ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি কুচক্রী মহল নারায়ণগঞ্জের শিল্পখাতকে অস্থিতিশীলের পাঁয়তারার চেষ্টা করে। বিপরীতে গোয়েন্দা নজরদারী ও তথ্যের ভিত্তিতে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের কারণে এসব ষড়যন্ত্র সফলতার মুখ দেখেনি। ফলে অন্যান্য শিল্প নগরী অধ্যুষিত এলাকার চেয়ে নারায়ণগঞ্জ তুলনামূলক অনেক স্বস্তিতে রয়েছে।
জানা গেছে, সিদ্ধিরগঞ্জে অবস্থিত আদমজী ইপিজেড, ফতুল্লার বিসিক, সোনারগাঁয়ের বিভিন্ন কলকারখানা, বন্দর ও রূপগঞ্জের কলকারখানায় এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকটি বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপর অতর্কিতভাবে হামলাও চালানো হয়েছে। তবে সেনাবাহিনী প্রায় সবগুলো ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সক্ষম হয়েছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ৯ এপ্রিল রূপগঞ্জে রবিনটেক্স নামক পোশাক কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা কারখানায় হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে পুলিশ ও সেনাবাহিনী উপস্থিত হলে তাদের উপরও বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকেরা হামলা চালায়।
শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনায় ইতোমধ্যে গোয়েন্দাদের কাছে বহু তথ্য রয়েছে। সেই তথ্য প্রমাণেরে ভিত্তিতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের ইন্ধন দেওয়ার অভিযোগে গার্মেন্ট শ্রমিক ফ্রন্টের নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি সেলিম মাহমুদকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
১২ এপ্রিল বিকেলে ইসলামী বক্তাদের ঢাকার মার্চ ফর গাজা কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে সেখান থেকে ফিরে প্রায় শ খানেক বহিরাগত আদমজী ইপিজেডে প্রবেশ করে ভাংচুর-হামলা চালিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। তখন খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক সেনাবাহিনীর টিম ঘটনাস্থল হতে ৪৫ জনকে আটক করে পুলিশ সোপর্দ করে।
৬ মার্চ সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজী ইপিজেডের ব্যবসা দখল নেওয়াকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও ছাত্রদলের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। তখন উভয় গ্রুপের অস্ত্র প্রদর্শনে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি হলে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থল পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
গত বছরের ১১ নভেম্বর সকালে জেলার পঞ্চবটির বিসিক শিল্পাঞ্চলে ‘ক্রোনী গ্রুপের’ দুটি পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভ শুরুর অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে আন্দোলনরত শ্রমিকদের একটি দল বিসিক শিল্পাঞ্চলের ভেতরে কয়েকটি কারখানায় ভাঙচুর চালায়। একপর্যায়ে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যৌথ চেষ্টায় বিক্ষোভরতরা শান্ত হোন।
গত বছরের ২০ অক্টোবর চাষাঢ়া গোল চত্বর অবরোধ করে বিক্ষোভ করে ফতুল্লার আইএফএস টেক্সওয়্যার নামক একটি কারখানার শ্রমিকেরা। এতে বন্ধ হয়ে যায় নারায়ণগঞ্জের সাথে ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ ও চট্টগ্রাম মহাসড়কের সংযোগ সড়কের যান চলাচল। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে মালিকপক্ষের সাথে কথা বলে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা অবরোধ প্রত্যাহার করে।
আদমজী ইপিজেডের ৬২ হাজার শ্রমিক, বিসিকের ২ লাখের বেশি শ্রমিকসহ প্রতিটি থানার শিল্প প্রতিষ্ঠানে অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে তারা সর্বক্ষণ যোগাযোগ রাখছেন। এর পাশাপাশি শান্তিপ্রিয় শিল্পনগরীকে অশান্ত করাতে কারো প্রচেষ্টা রয়েছে কিনা সেটারও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
সেনাবাহিনীর সহযোগিতা সম্পর্কে আদমজী ইপিজেডের (বেপজা) জিএম মাহবুব আহমেদ সিদ্দিক বলেন, সেনাবাহিনী আমাদের শুরু থেকেই সহযোগী করে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে আমাদের এখানে বেশ কয়েকটি অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে সেগুলো তারাই নিয়ন্ত্রণে এনেছেন। যেমন সম্প্রতি ভেতরে প্রবেশ করে হামলা চালিয়েছে যারা তাদেরও ৪৫ জনকে তারা আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে। তারা নিয়মিত আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে যাচ্ছে, নিয়মিত টহলও দেন। এবং আমাদের গেটে এসেও ঘুরে যান।
এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর কাছে আপনারা অভিযোগ দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলে, না আমরা সুনির্দিষ্ট কারো নামেই নালিশ দেইনি। তবে আমরা যদি আগে দেখে খবর পাই কোনো বিশৃঙ্খলা হবার সম্ভাবনা আছে তখন তাদের জানিয়ে রাখি। মূলত সেনাবাহিনী আমাদের প্রতিষ্ঠানের প্রতি নজর রাখছে।
নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু জানান, সেনাবাহিনী শুরু থেকে সক্রিয় হয়ে নারায়ণগঞ্জকে শান্ত রেখেছে। বিশেষ করে রোজার সময়ে তারা কোন প্রকার বিশৃঙ্খলা কিংবা ঝামেলা যেনো না হয় বিকেএমইএর সাথে বসে সহায়তা করেছে। সম্প্রতি রবিনটেক্সের ঝামেলাটাতেও তারা সুন্দর ভূমিকায় রেখে তদন্ত করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে গ্রেফতারও হয়েছে। এই ঝামেলাটা আসলে পরিকল্পিতভাবেই করা হয়েছে বলে আমি মনে করি। এককথায় সেনাবাহিনী নারায়ণগঞ্জকে শান্ত রাখতে যথেষ্ট প্রচেষ্টা করছে।
বিকেএমইএ’র সহ-সভাপতি মোরশেদ সারোয়ার সোহেল জানান, সেনাবাহিনী এখন পর্যন্ত আমাদেরকে শতভাগ সহায়তা করেছেন। তারা গার্মেন্টস মালিক কিংবা শ্রমিক দুটোরই সঠিক সহয়তায় এগিয়ে এসেছে। কারো পক্ষে নয় যেটা ন্যায্য সেটাই তারা করে যাচ্ছে। সবশেষ তাদের ভূমিকার জন্যে আমরা বড় ধরনের একটি সমস্যা থেকে মুক্তি পেয়েছি। গত পহেলা বৈশাখের ছুটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে একটা ঝামেলা হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় সেটার সম্মুখীন হইনি আমরা। শিল্প-কারখানাকে অস্থিতিশীল করতে কিছু গ্রুপ কাজ করেছে তবে এখন পর্যন্ত সেনাবাহিনীসহ সকল প্রশাসনের সহায়তায় ভালো চলছে।