আজ বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২৪, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

স্টাফ রিপোর্টার : জেমকন গ্রুপের মালিক ও যশোর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ। নাবিল ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের এবং তাঁদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া তাঁদের বিরুদ্ধে বিদেশে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচারেরও অভিযোগ রয়েছে। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতেও ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের নিয়োগকৃত প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের প্রত্যক্ষ মদদে

নিজেদের বহাল তবিয়তে রেখেছে কাজী নাবিল গ্রুপ। ইতোমধ্যে সরকারের নানা উন্নয়ন মূলক প্রকল্প বাঁধাগ্রস্ত করারও অভিযোগ রয়েছে কাজী নাবিল গ্রুপের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। আর এসব কাজে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মদদ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)’র প্রকল্প পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ফারুকের বিরুদ্ধে। তিনি নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের বুয়েট এর স্বাধীনতা হলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। সাবেক এমপি কাজী নাবিল আহমেদের ঘনিষ্ঠ সহচর এই আব্দুল্লাহ আল ফারুক। তার ইন্ধনে দিনদিন বেড়েই চলছে কাজী নাবিল আহমেদ এর দৌরাত্ম্য।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি জেমকন গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান ক্যাসেল কনট্রাকশন লিমিটেড অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)’র একটি দরপত্রে তথ্য উপাত্তের বিভ্রান্তির কারণে যা বাতিল করা হয়। কিন্তু বেজা কর্তৃপক্ষের এ আদেশ না মেনে ক্যাসেল কনট্রাকশন প্রকল্প পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ফারুকের ইন্ধনে তারা হাইকোর্টে রিট করেন। সূত্র আরও জানায়, কাজী নাবিল আহমেদ এর ঘনিষ্ঠজন ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ফারুকের মতো লোক এখনও প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে ঘাপটি মেরে রয়েছে বলেই অন্তবর্তী সরকারের প্রধান ইউনুস সরকারের নানা উন্নয়ন মূলক কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অবিলম্বে আওয়ামী লীগ সরকারের ‘সুবিধাভোগী’ এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না গ্রহণ করা হলে নানা ষড়যন্ত্র ও অনৈতিক কর্মকান্ড ঘটতে থাকবে।

অনুসন্ধান সূত্রে জানা যায়, জেমকন গ্রুপের মালিক কাজী নাবিল আহমেদের বিরুদ্ধে তার নির্বাচনী আসনে অবৈধভাবে ভূমি দখল, মামলা দিয়ে হয়রানি, মন্দির দখল, নদী দখল সহ বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। তার নামে রয়েছে নিজ জেলায় পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ৩৪ দশমিক ৬৩ একর জমি, একই জেলার বোদা উপজেলায় ২৫ দশমিক ৫৫ একর জমি, পঞ্চগড় সদরে ১০ দশমিক ০৮ একর জমি। এলাকার স্থানীয়দের অভিযোগ দলীয় প্রভাব খাঁটিয়ে এসব জমি তিনি জোরপূর্বক ও নামমাত্র মূল্যে নিজের করে নিয়েছেন।

এবিষয়ে তারা জানান, সাবেক সংসদ সদস্য জেমকন গ্রুপের মালিক কাজী নাবিল আহমেদ পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় নামমাত্র দামে ২০ বছর আগে জমি কিনে চা বাগান করেন। জমি কেনার পর থেকেই তিনি বেপরোয়া হয়ে মানুষের জমি দখল শুরু করেন। তার এ কর্মকাণ্ডে এলাকার মানুষজন অতিষ্ঠ। প্রতিবাদ করতে গেলে বিভিন্ন সময়ে মামলা দেওয়া হতো। বতর্মানে ৫০০টির বেশি মামলা দেওয়া হয়েছে স্থানীয়দের নামে। থানায় ভুক্তভোগীরা তার নামে কোনো মামলাই করতে পারেনি। হামলা ও নির্যাতন তো নিত্যদিনের ব্যাপার ছিল।

জেমকন গ্রুপের এলিন, হাফিজ, রশিদ, তাহেরের নেতৃত্বে তাদের লাঠিয়াল বাহিনী আমাদের ওপর হামলা করত। আদালতে কাজী নাবিলের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার সাহস পেত না। তাদের পক্ষে অনেক বড় বড় উকিল দাঁড় করানো হতো। আমরা আদালতে কোনো পাত্তাই পেতাম না। নাবিল আহমেদ ৩০০ একর জমি কিনলেও মানুষের ৭০০ একর জমি দখল করেছেন।

এদিকে, জেমকন গ্রুপের মালিক ও যশোর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ, তার পরিবারের সদস্য ও স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে থাকা ৩৬২ দশমিক ৪৩ একর জমি, সাতটি ফ্ল্যাট ও কয়েকটি বাড়ি ক্রোকের আদেশ দিয়েছে আদালত।

সেইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগকৃত তার ভাই কাজী আনিস আহমেদের ৬১ লাখ ৩৯ হাজার ৩১ মার্কিন ডলার মূল্যের শেয়ার (বাংলাদেশি টাকায় ৭৪ কোটি ৫২ লাখ ১৬ হাজার ৯৭৩ দশমিক ০৯ টাকা) অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছে আদালত।

দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন।

এসব সম্পত্তির মধ্যে কাজী নাবিল আহমেদের নামে রয়েছে পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়ার ৩৪ দশমিক ৬৩ একর জমি, একই জেলার বোদা উপজেলায় থাকা ২৫ দশমিক ৫৫ একর জমি, পঞ্চগড় সদরে থাকা ১০ দশমিক ০৮ একর জমি, খুলনার ২৪৬ একর জমি, একই জেলার রুপসায় থাকা ২৬ দশমিক ৫১ একর জমি, রাজধানীর ধানমন্ডিতে ১১ শতক জমিসহ ছয়তলা ভবনের এক তৃতীয়াংশ, মোহাম্মদপুরে থাকা দুইটি প্লট ও গুলশানের একটি ফ্ল্যাট।

এছাড়া কাজী নাবিলের পিতা মৃত কাজী শাহেদ আহমেদের ক্রোককৃত সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে ঢাকার ধানমন্ডিতে ১৬ দশমিক ৫০ শতাংশ জমিসহ ছয়তলা ভবন ও যশোরে জমিসহ দুইতলা বাড়ি। যশোরের কাজীপাড়ায় থাকা ১৫ দশমিক ৯৮ একর জমি ও কক্সবাজারের টেকনাফে থাকা ২ দশমিক ২৪ একর জমি।

ক্রোকের আদেশ দেয়া সম্পত্তির মধ্যে কাজী নাবিলের মা আমিনা আহমেদের নামে রয়েছে ধানমন্ডির তিনটি ফ্ল্যাট ও কক্সবাজারের সেন্টমার্টিনে থাকা ১ দশমিক ৪৪ একর জমি।

ক্রোকের আদেশ দেয়া সম্পত্তির মধ্যে কাজী নাবিলের ভাই কাজী আনিস আহমেদের নামে রয়েছে ধানমন্ডিতে ১১ শতক জমিসহ ছয় তলা বাড়ির এক তৃতীয়াংশ ও গুলশানের একটি ফ্ল্যাট।

কাজী নাবিলের অপর ভাই কাজী ইনামের নামে ধানমন্ডিতে ১১ শতক জমির উপর থাকা ছয়তলা ভবনের এক তৃতীয়াংশ, ধানমন্ডি ও গুলশানে থাকা আরো দুইটি ফ্ল্যাট ক্রোকের আদেশ দেয়া হয়েছে।

Exit mobile version