পথচারীরা যেন ট্র্যাফিক ধীর না করে ও নিরাপদে সড়ক পার হতে পারে সেই কথা মাথায় রেখেই নির্মাণ করা হয় ফুটওভার ব্রিজ। একই ভাবে গতবছরই ঢাকা নারায়ণগঞ্জ সংযোগ সড়কে জেলা পরিষদ এলাকায় দীর্ঘ সময় নগরবাসীর চাওয়া ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। তবে সম্প্রতি সময় দেখা যায় সন্ধ্যা হলেই ব্রিজটিকে এড়িয়ে চলেন পথচারীরা, বিশেষ করে নারীরা। জীবনের ঝুঁকি নিয়েই ব্যস্ততম সড়কের মাঝ দিয়েই পার হন তারা। স্থানীয়দের অভিযোগ সন্ধার পর ব্রিজে অন্ধকার ও ছেলেদের আড্ডা থাকায় ঝুকি নিয়ে হলেও সড়ক দিয়ে পার হন তারা।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) সন্ধ্যায় সরেজমিনে ডিসি অফিসের সামনের সেই ফুটওভার ব্রিজে দেখা মেলে এমন চিত্র। অন্ধকারের মধ্যে কিছু লোকজন মিলে বসে আছেন ব্রিজের ২ পাশের সিঁড়ির জায়গায়। একদিকে ব্রিজে অন্ধকার, অন্যদিকে লোকেদের আড্ডা তাই ভয়ের কারণেই সন্ধ্যার হলেই ফুটওভার ব্রিজ এড়িয়ে চলেন নগরবাসী। দিনের বেলা কয়েকজন রাস্তা পারাপারের জন্য ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করলেও সন্ধ্যায় পথচারীরা সড়ক দিয়ে পার হয়।
এ বিষয়ে স্থানীয় চায়ের দোকানদার জামাল তালাকদার বলেন, ‘দেশের অবস্থা তেমন ভালা না। প্রায়ই চুরি, ডাকাতি ছিন্তাইয়ের খবর হুনি। ব্রিজটা করা হইসে আমাদের জন্যই কিন্তু সন্ধ্যার পর ওইখান দিয়ে কেউই যায় না। আমি দোকান বন্ধ কইরা বাসায় যাইতে রাত ১০-১১টা বাজে। তখন রাস্তাঘাট এমনি একটু খালি থাকে। যদি দেখি ব্রিজের আগা গোড়ায় কেউ নাই তাইলে পার হই, নাইলে এই মাঝখান দিয়াই চলে যাই।’
সরকারি মহিলা কলেজে পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী ইসরাত বলেন, ‘পড়াশোনার পাশাপাশি খরচের জন্য আমি বাড়ি-বাড়ি গিয়ে টিউশনি পড়াই। কলেজ-ব্যাচ শেষ করে বিকেলে বের হেই স্টুডেন্ট পড়ানোর জন্য। সেই সুবাদে প্রতিদিনই আমার এই সড়ক পার হতে হয়। নির্মাণ হওয়ার পর প্রথম প্রথম অনেকেই ব্রিজ দিয়ে রাস্তা পারাপার করলেও ধিরে ধিরে মানুষ কমে যায়। মাঝের মধ্যে মেয়েরা এই ব্রিজ দিয়ে পার হওয়ার সময় আড্ডা দেওয়া বাজে ছেলেরা ডাক-ইশারা দেয়, বিভিন্ন কথা বলে। এর ভুক্তভোগী আমি নিজেও তাই ব্রিজ একদমই ব্যবহার করা হয় না। চেষ্টা করি সন্ধ্যা আগে বাসায় ফিরতে, যদি সন্ধ্যা হয়ে যায় তাহলে কিছু দূর হেটে নতুন কোর্ট বা এসপি অফিসের সামনে দিয়ে পার হই।’
পোশাক শ্রমিক আসমা বলেন, ‘আমরা মাইয়া মানুষ। ব্রিজে ওঠার পর যদি কেউ কয় ‘যা আছে দিয়ে যা’ তখন আমাগো কিছু করা থাকবো না। যখন আমগো অফিস ছুটি হয় তখন সবাই গেলে একসাথে যাই, কিন্তু একা বা ২জন থাকলে ব্রিজে উঠি না।’
এবিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘অন্ধকারের বিষয়টা খুব তাড়াতাড়ি সমাধান হয়ে যাবে। ইতিমধ্যে লাইটের কাজ চলছে। তবে কেন নারীরা বা পথচারীরা ব্রিজ ব্যবহার করছে না সেই বিষয়ে আমরা নজরে রাখছি। সেখানে যদি কেউ যদি কোন নারীকে উত্যক্ত করে তাহলে তার বিরুধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ফুটওভার ব্রিজ পথচারীদের নিরাপত্তার জন্য নির্মাণ হয়েছে, সেটা বসে আড্ডা দেওয়ার জায়গা না।’