বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এখন থেকে পুলিশের নির্ধারিত জরুরি যোগাযোগ লাইনে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারবেন। এ উদ্যোগের মাধ্যমে যে কোনো নিরাপত্তাজনিত ঘটনা তাৎক্ষণিক জানানো এবং দ্রুত সহায়তা পাওয়ার সুযোগ তৈরি হলো।
সোমবার পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান থেকে এ ঘোষণা আসে। তারা সম্প্রতি গাজায় হামলা নিয়ে বিক্ষোভের সময় বিদেশি কোম্পানিগুলোর কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ছয়টি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
বৈঠকে অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ছিল- নেসলে বাংলাদেশ, কোকা-কোলা বাংলাদেশ বেভারেজেস, ইউনিলিভার বাংলাদেশ, বাটা সু কোম্পানি বাংলাদেশ, রেকিট বেনকিজার বাংলাদেশ, পেপসিকো ও জুবিল্যান্ট ফুড ওয়ার্কস বাংলাদেশ।
জানানো হয়, ৭ ও ৮ এপ্রিল দেশের বিভিন্ন শহরে এসব কোম্পানির কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানো হয়। পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় অন্তত ১৪০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং প্রায় এক ডজন মামলা হয়েছে।
বিডা চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বলেন, আইজিপি, সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা ও বিডার কর্মকর্তাদের একসঙ্গে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বসা শুধু সময়োপযোগী নয়, নজিরবিহীন। এটি কেবল একটি সৌজন্য সাক্ষাৎ নয়। এটি এক ধরনের বার্তা যে বাংলাদেশ বিনিয়োগকারীদের পাশে আছে, বিশেষ করে যখন চ্যালেঞ্জ আসে।
তিনি আরও বলেন, এ কোম্পানিগুলো হাজার হাজার কর্মজীবী ও তাদের পরিবারের জীবিকার উৎস। প্রতিবাদের অধিকার আছে, কিন্তু যে প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মসংস্থান, স্থিতিশীলতা ও প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করে, সেগুলো ধ্বংস করা কোনো সমাধান নয়।
বিডা চেয়ারম্যান পুলিশের তাৎক্ষণিক সাড়া ও দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতির জন্য প্রশংসা করেন।
প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরা ভাঙচুর, ক্ষয়ক্ষতি ও কার্যক্রমে বিঘ্ন নিয়ে সরাসরি অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন। এর প্রতিক্রিয়ায় আইজিপি কার্যালয় জানায়, ভুক্তভোগী কোম্পানিগুলোর জন্য নির্দিষ্ট জরুরি যোগাযোগ লাইন চালু করা হবে, যার মাধ্যমে তারা তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশি সহায়তা পাবে।
আইজিপি বাহারুল আলম বিনিয়োগকারীদের পূর্ণ সহায়তার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, আমরা কেবল প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য এখানে আসিনি, বরং আস্থা গড়ে তুলতে এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা যেন না ঘটে, তা নিশ্চিত করতেই এসেছি।
এ আলোচনার ফলে বিডা, পুলিশ এবং ব্যবসায়িক সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে একটি প্রতিরোধ পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নতুন নিরাপত্তা প্রটোকল, দ্রুত সাড়া দেওয়া ইউনিট এবং উন্নত সংকট যোগাযোগ চ্যানেল।
বিডা চেয়ারম্যান বলেন, এ সংলাপ কেবল প্রতিক্রিয়ার জন্য নয়। এটি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য। আরও গুরুত্বপূর্ণভাবে, এটি সরকারের অঙ্গীকার প্রতিফলিত করে যে আমরা বিনিয়োগকারীদের পাশে থাকি শুধু ভালো সময়ে নয়, প্রতিকূল সময়েও।
কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিরা বিডা ও বাংলাদেশ পুলিশের উদ্যোগের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম ও ভবিষ্যৎ সম্প্রসারণ পরিকল্পনার প্রতি নতুন আস্থা ব্যক্ত করেন।
এ উদ্যোগ বিডার বৃহত্তর মিশনের অংশ, যার লক্ষ্য হলো বাংলাদেশকে একটি নিরাপদ, টেকসই ও বিনিয়োগবান্ধব গন্তব্য হিসেবে গড়ে তোলা, যা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অগ্রাধিকারের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।