
মামলা নামক শেঁকল থেকে এখনও মুক্ত হতে পারেননি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। আদালতের দ্বারে দ্বারে হাজিরা দিয়ে সর্বস্ব হারিয়েছেন কেউ কেউ। পারিবারিক জীবনেও পড়েছে বিরূপ প্রভাব।
এরকমই এক ব্যক্তিকে সম্প্রতি দেখা গেছে ঢাকার আদালত পাড়ায়। তার নাম মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, পেশায় ব্যবসায়ী। পরিবার নিয়ে থাকেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রতিটি কোণা তার পরিচিত। গত দশ বছর ধরে নিয়মিত চলাফেরা করছেন আদালত চত্বরে।
তার বিরুদ্ধে থাকা মামলায় অভিযোগ রয়েছে, তিনি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছেন। যদিও তার দাবি রাজনৈতিক পরিচয়ই তার মূল অপরাধ।
মহিউদ্দিনের দাবি, পুলিশ তাকে বলতো এমনভাবে মামলা দেবে, যাতে জামিন না পায়। আর সেটাই করেছে তারা। তাতে মহিউদ্দিনের অর্থ, মানসম্মান, কর্মক্ষেত্র সবই শেষ হয়ে গেছে।
১২ দিনের রিমান্ডে নিয়েও তার ওপর অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে। তার দাবি, মিথ্যা স্বীকারোক্তি নিতেই রিমান্ডে নিয়ে ইলেক্ট্রিক শকসহ নানা ধরনের নির্যাতন করা হয়েছে।
রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে এই প্রশাসনিক অস্ত্রের ব্যবহার পুরোনো। আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হিসেবে যারাই মাঠে ছিলেন, গত পনেরো বছরে তারা তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন।
আদালত চত্বরে আরও কয়েকজন রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাদের মধ্যে অনেকের ঘাড়ে রয়েছে শতাধিক মামলা। অনেকে আবার হত্যা মামলারও আসামি হয়েছেন। ১৫ বছর ধরে আর্থিক ও সামাজিকভাবে হেয় হচ্ছেন। কিছু মামলা প্রত্যাহার হলেও এখনও অনেকের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে বলে অভিযোগ তাদের।
বিএনপির দাবি, তাদের নেতাকর্মীদের নামে লক্ষাধিক মামলা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিচারিক প্রক্রিয়ায় বড় বড় নেতাদের বিরুদ্ধে করা বেশ কিছু মামলা বাতিল হয়েছে। রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তে ঢাকার আরও প্রায় হাজারখানেক মামলা প্রত্যাহারের অপেক্ষায় রয়েছে। কিন্তু কেন্দ্র পর্যন্ত যাদের পৌঁছানোর সক্ষমতা নেই, তাদের অনেকেই রয়ে গেছেন হিসেবের বাইরে।
ঢাকা মহানগর আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী জানিয়েছেন, কিছু মামলা আইনি প্রক্রিয়ায় আর কয়েকটি রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তে প্রত্যাহার করা হচ্ছে। এর মধ্যে অনেকগুলো মামলা শেষও হয়েছে।
থানায় দায়ের হওয়া মামলাগুলো মিথ্যা ও গায়েবি উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার চাইলে সেগুলো তদন্ত কর্মকর্তাদের মাধ্যমে চূড়ান্ত রিপোর্ট দিয়ে শেষ করতে পারেন।
এদিকে, রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলেও মামলা নামক রাজনৈতিক এ অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধ হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, এবার রাজনৈতিক মামলার শিকার হচ্ছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
তাই সাধারণ মানুষের দাবি– প্রতিহিংসা নয়, বন্ধ হোক যেকোনো মিথ্যা মামলার হয়রানি। তৈরি হোক আইনের শাসনের দৃষ্টান্ত।