মার্কিন শুল্ক স্থগিতে দেয়া প্রতিশ্রুতি সুবিধা নাকি ভারসাম্যহীনতা?
প্রকাশের তারিখঃ ১৬ এপ্রিল, ২০২৫
সম্প্রতি ১৮৫টি দেশ ও অঞ্চলের পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্কারোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতেই এই বাড়তি শুল্কারোপ করে দেশটি। এই তালিকায় বাংলাদেশও রয়েছে। বাংলাদেশি পণ্যের শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩৭ শতাংশ করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এরপর গত ৭ এপ্রিল আরোপিত বাড়তি শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিতের আবেদন জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে চিঠি দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টার এই আহ্বানে সাড়াও দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
অন্যদিকে, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) কাছে চিঠি দিয়েছে। সেই চিঠিতে মার্কিন ১০০টি পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে।
তবে এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন সম্ভব কি না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অর্থনীতিবিদরা। যদিও ব্যবসায়ীরা বলছেন, এর কোনও বিকল্প হাতে ছিল না।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বভাবগত কারণে তড়িঘড়ি করা ছাড়া উপায় ছিল না। এক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো করলেও অযৌক্তিক কোনও কিছু প্রস্তাব করা হয়নি।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেছেন, মার্কিন ১০০টি পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে পণ্যগুলো কোন ধরনের বা এর ভেতর তৈরিকৃত পণ্য কোনগুলো সে বিষয়টি বুঝতে হবে। এছাড়া, এই পণ্যগুলো মার্কিন বাজারকে টার্গেট করে করা পণ্য কি না সেটিও বুঝতে হবে। পাশাপাশি এটি আমাদের বাণিজ্য নীতির সাথে সাংঘর্ষিক কি না সেটি বোঝার বিষয়ও রয়েছে।
এদিকে, আমদানি বাড়িয়ে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর যে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে, তা প্রতিযোগিতা নীতি এবং ক্রয়নীতির সাথে সাংঘর্ষিক বলেও মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে মুনাফার বিষয়টি আগে বিবেচনায় নেবেন তারা।
এ বিষয়ে ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, মার্কিন প্রশাসনের বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর লক্ষ্যের ক্ষেত্রে আগামীতে দেশটির উদ্যোগ কী হবে বা মূল্যায়ন প্রক্রিয়াগুলো এখনও পরিষ্কার নয়। দেশটি থেকে বাড়তি পণ্য আমদানির বিষয়টিও কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতানীতি ও প্রকিউরমেন্টনীতির সাথে সাংঘর্ষিক হতে পারে।
ফজলে শামীম এহসান বলেন, বড় একটি আমদানি বেসরকারি খাত থেকে হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে সরকার বলেই ব্যবসায়ীরা আমদানি করবে বিষয়টি তা নয়, ব্যবসা হবে কি না সে বিষয়টিও জড়িত। এক্ষেত্রে দেশটির পণ্যের দাম, লজিস্টিক ও কর ইত্যাদি সবকিছু মিলেই একটি সংযুক্ত প্রকল্প হতে হবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আলোচনার ক্ষেত্রে নিজস্ব বাণিজ্যনীতি এবং ক্রয়নীতি মাথায় রাখার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। একক কোনো দেশকে বিশেষ সুবিধা দেয়া হলে অন্য দেশের সাথে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ চুক্তি আলোচনায় ভারসাম্যহীনতা তৈরি হবে বলেও আশঙ্কা করছেন তারা।
ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, আমরা যেন আমাদের নীতির কাঠামোর ভেতর থেকে আগামী দিনের যেকোনও ধরনের সহযোগিতা কাঠামো বের করার চেষ্টা করে। একক কোনও দেশকে বাড়তি সুবিধা দেয়া হলে সেটি নেতিবাচক উদাহরণ তৈরি করতে পারে। বাণিজ্য বা বিনিয়োগ চুক্তির আলাপ-আলোচনার ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা বাড়তি শুল্কের তালিকায় পোশাক শিল্প ও চামড়াজাত পণ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ পণ্য নেই বলেও জানিয়েছেন ব্যবসয়ী ও অর্থনীতিবিদরা।
সম্পাদক: মো: রবিউল হক। প্রকাশক: মো: আশ্রাফ উদ্দিন । প্রকাশক কর্তৃক বি এস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২, টয়েনবি সার্কুলার রোড (মামুন ম্যানশন, গ্রাউন্ড ফ্লোর), থানা-ওয়ারী, ঢাকা -১২০৩ থেকে মুদ্রিত দেলোয়ার কমপ্লেক্স, ২৬ শহীদ নজরুল ইসলাম সড়ক (হাটখোলা), ওয়ারী, ঢাকা -১২০৩ থেকে প্রকাশিত । মোবাইল: ০১৭৯৮৬৫৫৫৫৫, ০১৭১২৪৬৮৬৫৪ ওয়েবসাইট : dailyjanadarpan.com , ই-পেপার : epaper.dailyjanadarpan.com