কোটা সংস্কার থেকে সরকার পতনের একদফা, টানা ৩৬ দিনের আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এই অভ্যুত্থানে জেন জি বা জেনারেশন জেডের সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছিল। যাদের বেশিরভাগই কিশোর বা বয়স ১৮ বছরের নিচে।
বিষয়টি মাথায় রেখে জেন-জি’দের ভোটাধিকার নিশ্চিতে ভোটার হওয়ার ন্যূনতম বয়স কমানোর প্রস্তাব দিয়েছে অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া ছাত্রদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। ভোটারের বয়স ১৮ থেকে কমিয়ে ১৬ করার প্রস্তাব দিয়েছে দলটি। অন্যদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ন্যূনতম বয়স ২৩ বছর করারও দাবি জানিয়েছে এনসিপি।
এনসিপির আগে এক অনুষ্ঠানে ভোটারের সর্বনিম্ন বয়স ১৭ করা পক্ষে মত দেন আন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস-ও। তিনি বলেছিলেন, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন কী সুপারিশ করবে, তা আমার জানা নেই। তবে ভোটার হওয়ার ন্যূনতম বয়স ১৭ হওয়া উচিত।
তবে ভোটার হওয়ার ক্ষেত্রে ন্যূনতম বয়সসীমা ১৬ করতে হলে নানা আইনি বাধায় পড়তে হবে। কারণ, বাংলাদেশ আর্ন্তজাতিক শিশু সনদে সাক্ষরকারী দেশ। তাছাড়া, এটি করতে গেলে সংবিধানের ১২২ অনুচ্ছেদেরও সংশোধন আনতে হবে। আবার অন্য অনেক রাজনৈতিক দলেরই সংবিধান সংশোধনে মত নেই।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বললেন, এক্ষেত্রে আইনগত পরিবর্তন, ভোটার তালিকা প্রণয়নের প্রশ্ন রয়েছে। বিষয়গুলো বেশ সময়সাপেক্ষ। তাছাড়া, ১৮ বছরের নিচে ভোটার হওয়ার বিষয়টির গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউ এবং ওয়ার্ল্ড অ্যাটলাসের তথ্য মতে, ২৩৬টি দেশের মধ্যে দশটি দেশে ১৬ বছর বয়সীরা ভোট দিতে পারে। আর ৬টি দেশে ভোটার হওয়ার সর্বনিম্ন বয়স ১৭ বছর। তবে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বয়স কমানো যুক্তিযুক্ত হবে না বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ বলেন, ১৬ থেকে ১৭ বছর বয়সী একজন ব্যক্তি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। এত অল্প বয়সে তরুণদের রাজনীতিকরণ করা সঠিক সিদ্ধান্ত নয়।
অপরদিকে এনসিপির প্রস্তাবনার পক্ষে-বিপক্ষে মত দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। একজন শিক্ষার্থী বলেন, আন্দোলন করা আর ভোট ভিন্ন বিষয়। ২০ বছর আগে ভোটের সুযোগ দেয়া উচিত নয়।
অপর এক শিক্ষার্থী বলেন, ভোটের বয়স ষোলো ও আঠারোর মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই। আরেকজন বলেন, ১৬ বছর বয়সী একজন ব্যক্তি অনেক কিছুই বুঝতে পারে। আবার অনেকে ১৮ বছর পরেও ম্যাচিউর হয়ে ওঠতে পারে না।
তবে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ভোটের বয়স নিয়ে বির্তক নতুন কিছু নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অনেক দেশই ভোটারের সর্বনিম্ন বয়স ১৬ বছর করার দাবি উঠেছে।