বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় গত ১৯ জুলাই নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় গুলিতে নিহত হন আবুল হোসেন মিজি। এই ঘটনায় ২১ আগস্ট তার মা সাহিদা বেগম বাদি হয়ে ফতুল্লা থানায় ৮০ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা কারেন।
এই মামলায় গত ৫ মাসে মাত্র ৪ জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। এর মধ্যে তাজুল ইসলাম শামীম একজন। যিনি আগাগোড়া বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত। শ্রমিক দলের যুগ্ম সম্পাদকের পদেও ছিলেন দীর্ঘ দিন।
প্রশ্ন উঠেছে বিএনপির কর্মী হয়েও শামীম কীভাবে গণহত্যা মামলায় জেলে গেলেন। শামীমের স্বজনরা জানান, ৫ আগস্টের পর নিতাইগঞ্জ ট্রাকস্ট্যান্ড দখল দিয়ে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি নেতা আবু আল ইউসুফ খান টিপুর সাথে দ্বন্দ্বে জড়ায় শামিম। যার পরিণতিতেই এ ঘটনা ঘটে।
তাজুল ইসলাম শামিমের বোন রোকেয়া আক্তার জানান, ট্রাক স্ট্যান্ড দখল করার জন্য এসেছিলেন টিপু। এ সময় তার ভাইয়ের সাথে হাতাহাতি হয় টিপুর। তাই শত্রুতার জেরে তার ভাইয়ের নামে মামলা দেয়া হয়েছে।
শামিমের মেয়ে সাইমা শারিন শিমলা জানান, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে রাজপথে নেমেছিলেন তিনিও। তার বাবা তাকে অনুপ্রেরণা দিতো আন্দোলনে যাওয়ার জন্য। তার মনেও একই প্রশ্ন তার বাবা কীভাবে ছাত্র হত্যার সাথে জড়িত হতে পারে। শামীমের স্ত্রী লাকী বেগমও জানান একই কথা। তিনি তার স্বামীর মুক্তি চান।
এখন বিষয় হলো ট্রাক স্ট্যান্ড দখল নিয়ে দ্বন্দ্বে শামিমের নামে গণহত্যা মামলা দেয়া হয়েছে বিষয়টি কতটা সত্য? সেখানে গিয়ে স্ট্যান্ড সংশ্লিষ্ট লোকজন ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, টিপু তার লোকজন নিয়ে ট্রাক স্ট্যান্ডে এসে দখল করতে চায়। এ সময় শামীম এসে বাধা দিলে শামীমের সাথে টিপুর হাতাহাতি হয়। কিছুদিন পরে শামীমকে ফতুল্লা থানায় চায়ের দাওয়াত দিয়ে নিয়ে গ্রেফতার করা হয় বলেও জানান তারা।
গণহত্যা মামলায় শামিম গ্রেফতার হওয়ার পর নারায়ণগঞ্জজুড়ে সমালোচনার ঝড় বইছে । বিএনপির নেতারাও নিন্দা জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান জানান, এই মামলায় যে শামীমের নাম আছে তা তিনি জানতেন না। গ্রেফতার হওয়ার পর বিষয়টি তিনি জানতে পেরেছেন। গ্রেফতারের খবর শোনার পর থানায় শামিমকে ছেড়ে দিতে বলেছিলেন বলেও জানান তিনি।
মামলার বাদি নিহত আবুল হোসেনের মা সাহিদা বেগম জানান, কে আওয়ামী লীগ করে কে বিএনপি করে তা তিনি জানেন না। টিপু ও সাখাওয়াত মিলে এই মামলা করেছে। জিডি করে তিনি তার স্বাক্ষর দিয়ে চলে এসেছেন বলেও জানান তিনি।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন, টিপু। তিনি জানান, এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং বানোয়াট বরং বাদীকে তিনি চেনেন না বলে জানান তিনি।
মামলার বিষয়ে ফতুল্লা মডেল থানার ওসি শরিফুল ইসলাম জানান, গ্রেফতারের আগে তদন্ত হওয়া উচিত ছিলো।
এভাবে মিথ্যা মামলায় বহু মানুষ ঘরছাড়া হয়ে আছেন। এ ঘটনার আরেক ভুক্তভোগী উত্তরার আবুল কালাম। গত ২৩ জুলাই রাজনৈতিক কারণে জেলে গিয়েছিলেন তিনি। পরে জামিনে বের হন ৮ আগস্ট। অথচ তিনিই ৫ আগস্টের হত্যা মামলায় আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে আসামি হয়ে আছেন।
ভুক্তভোগী আবুল কালাম জানান, ১৭ দিন জেল খেটে বাইরে এসে দেখেন তার নামে ছাত্র হত্যার মামলা হয়েছে। জিনিসটা নিয়ে তিনি খুব আতঙ্কে আছেন এবং ভয়ে রাতে ঘুমাতে পারেন না বলেও জানান তিনি।
তবে এসব ঘটনার সমাধান কী হতে পারে? এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পিপি ওমর ফারুক ফারুকী জানান, প্রতিহিংসার কারণে অনেক নিরপরাধ মানুষ মামলার শিকার হয়েছে। এসব বিষয়ে থানাকে ভালোভাবে অবগত করতে হবে। যারা দোষী না তারা যেন কোনোভাবে হয়রানির শিকার না হয় এমনটাই আসা করেন তিনি।
হয়রানি ও বিতর্ক এড়াতে ৫ আগস্টের পর হত্যা মামলাগুলোর জন্য একটি সেল গঠন করে তদন্তের পরামর্শও দেন এই সিনিয়র এই আইনজীবী।