আজ
|| ৮ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ২৪শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ৭ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি
সুন্দর সেন্ট মার্টিনের ভাঙা জেটির ফাঁড়া
প্রকাশের তারিখঃ ৬ জানুয়ারি, ২০২৫
বঙ্গোপসাগরের মধ্যে ৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের প্রবালসমৃদ্ধ দ্বীপ সেন্ট মার্টিন। পর্যটক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের দ্বীপে ওঠানামার একমাত্র ভরসা পূর্ব সৈকতের জেটি। ২০০২ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের জেটিটি নির্মাণ করে দেয়। জেটির প্রস্থ ১৮ ফুট। জেটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেয় কক্সবাজার জেলা পরিষদ।
কিন্তু ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় সিডরের আঘাতে জেটির কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর টানা ১১ বছর জেটির সংস্কার হয়নি। কয়েক বছর ধরে জেলা পরিষদ সংস্কার করলেও জেটির এখন নাজুক অবস্থা।
গত ৮ ও ৯ ডিসেম্বর সরেজমিন দেখা গেছে, জেটির দুই পাশের রেলিং ভেঙে পড়েছে। ইট-সিমেন্ট খসে পড়ছে। জেটির মধ্যভাগে কয়েকটি অংশের ঢালাই (তলা) ধসে পড়েছে। সেখানে কাঠের তক্তা বিছিয়ে পর্যটকের চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। জেটির মধ্যভাগের দুই পাশে নৌযানে ওঠানামার জন্য নির্মিত দুটি সিঁড়িও ভেঙে পড়েছে। সেখানেও তক্তা বিছিয়ে লোকজনকে নৌকায় ওঠানামা করা হচ্ছে। জেটির শেষ অংশের (বাজারের কাছে) অন্তত ১৬০ ফুট বালুর নিচে দেবে গেছে। একসঙ্গে কয়েক হাজার পর্যটক যখন জেটিতে নামেন, তখন জরাজীর্ণ জেটি দুলতে থাকে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ী ও পর্যটকেরা জানান, যেকোনো সময় ভাঙাচোরা জেটিটি সাগরে দেবে কিংবা ধসে পড়তে পারে। তখন পর্যটকসহ বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটতে পারে। জেটি সংস্কারের জন্য জেলা পরিষদ প্রায় ৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও কাজ শুরু হয়নি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অভিযোগ, জেটি নির্মাণের পর থেকে নৌবাহিনী কিংবা কোস্টগার্ডের কোনো জাহাজ জেটিতে ভেড়েনি। কিন্তু এক যুগের বেশি সময় ধরে ৭-১০টি পর্যটকবাহী জাহাজ জেটিতে ভেড়ে। জাহাজের ধাক্কাতেই জেটির ভিত ও কাঠামো নষ্ট হচ্ছে।
১ ডিসেম্বর থেকে কক্সবাজার শহর থেকে বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজের চলাচল শুরু হয়। বর্তমানে পাঁচটি জাহাজে দুই হাজার পর্যটক সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ করছেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জাহাজ সেন্ট মার্টিন জেটিতে ভেড়ে। আবার বেলা তিনটার দিকে পর্যটক নিয়ে সেই জাহাজ পুনরায় কক্সবাজার শহরে ফিরে আসে। ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন সাগরপথে জাহাজ চলাচল করবে।
৮ ডিসেম্বর সেন্ট মার্টিন দ্বীপে গিয়ে দেখা যায়, জেটির সম্মুখভাগের পন্টুনে জাহাজ ভিড়তেই তার ধাক্কায় জেটি কাঁপছে। এরপর হুড়োহুড়ি করে জাহাজের আট শতাধিক যাত্রী (পর্যটক) ভাঙা জেটিতে নামতে শুরু করেন। একই সঙ্গে জেটিতে ভেড়ে আরেকটি জাহাজ। ওই জাহাজ থেকেও নামতে থাকেন আট শতাধিক পর্যটক।
দেখা গেছে, জেটিতে নেমে হাজারো পর্যটক দ্বীপের দিকে হেঁটে যেতে থাকেন। পর্যটকের মালামাল বহনের যানবাহন জেটিতে ঢুকতে দেওয়া হয় না। পুরো জেটি পর্যটকের হেঁটে পার হতে হয়। হেঁটে যাওয়ার সময় অনেকে জেটির তলায় বিছানো কাঠের তক্তা কিংবা ভাঙা তক্তায় পা আটকে পড়ে যান। একসঙ্গে হুড়োহুড়ি করে হাজারো পর্যটক নামতে গিয়ে কেউ কেউ ভাঙা রেলিং দিয়ে সাগরে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়।
স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তান নিয়ে সেন্ট মার্টিন ভ্রমণে যান ঢাকার রামপুরা এলাকার ব্যবসায়ী মনোয়ার আলম। ভিড় এড়িয়ে জাহাজ থেকে জেটির পন্টুনে নামতেই তাঁদের আধা ঘণ্টা সময় লেগে যায়। এরপর জেটিতে নেমে পড়েন বিপাকে। স্বামী-স্ত্রী দুজন দুই শিশুকে কোলে তুলে নেন। হাতে দুটি ব্যাগ নিয়ে দুজন হাঁটতে থাকেন। কিছুদূর যাওয়ার পর কাঠের ভাঙা তক্তায় আটকা পড়েন স্ত্রী। মনোয়ার আলম সতর্কতার সঙ্গে প্রথমে দুই সন্তান তারপর স্ত্রীকে সেই ভাঙা অংশ পার করেন। জেটির শেষ প্রান্তের বাজারে পৌঁছে হাঁপ ছেড়ে বাঁচেন। ক্ষোভের সঙ্গে মনোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, দ্বীপে ওঠানামার একমাত্র জেটির এমন নাজুক অবস্থা পর্যটকদের হতাশ করছে। ভাঙা রেলিং ও ফুটো তক্তার পাটাতন পেরিয়ে দ্বীপের মাটিতে পা রাখা নারী–শিশুদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকির।
জাহাজ মালিকদের সংগঠন সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, ২ বছর আগে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা খরচ করে জেটিতে পন্টুন ও ফুটো অংশে কাঠের তক্তা বিছানো হয়। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে কাঠের তক্তা নষ্ট হয়ে গেছে। এখন জেটির অবস্থা নড়বড়ে। সতর্কতার সঙ্গে পর্যটকদের জাহাজে ওঠানামা করানো হয়। নতুন জেটি নির্মাণ হলে ঝুঁকি কমে যাবে।
সেন্ট মার্টিন ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় সিডরের আঘাতে জেটিটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর দীর্ঘ ১১ বছরে জেটির সংস্কার হয়নি। তখন দৈনিক ৬ থেকে ১৫ হাজার পর্যটক ঝুঁকি নিয়ে দ্বীপে ওঠানামা করতেন। এরপর দুই দফায় সংস্কার কাজ চললেও এখন জেটির অবস্থা মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। গত জুন মাসে জেলা পরিষদ জেটি সংস্কারের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ দিলেও এখনো কাজ শুরু হয়নি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আল মারুফ প্রথম আলোকে বলেন, জেটি সংস্কারের জন্য প্রায় ৭ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে, ঠিকাদারও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সেপ্টেম্বর থেকে সংস্কারকাজ শুরুর কথা থাকলেও সাগর উত্তাল থাকায় সম্ভব হয়নি। নভেম্বর থেকে পর্যটকের জন্য সেন্ট মার্টিন উন্মুক্ত রাখা হয়। এ কারণে জেটির সংস্কারকাজ শুরু করা যাচ্ছে না। ৩১ জানুয়ারির পর সেন্ট মার্টিনে পর্যটকের যাতায়াত বন্ধ হয়ে যাবে। ১ ফেব্রুয়ারি থেকে জেটির কাজ শুরু হবে। জেটির বেশির ভাগ অংশ বালুতে দেবে গেছে। নতুন জেটির উচ্চতা বাড়বে, রেলিংসহ বিভিন্ন কাজে লোহার পরিবর্তে স্টিলের অবকাঠামো লাগানো হবে।
সম্পাদক: মো: রবিউল হক। প্রকাশক: মো: আশ্রাফ উদ্দিন ।
প্রকাশক কর্তৃক বি এস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২, টয়েনবি সার্কুলার রোড (মামুন ম্যানশন, গ্রাউন্ড ফ্লোর), থানা-ওয়ারী, ঢাকা -১২০৩ থেকে মুদ্রিত
দেলোয়ার কমপ্লেক্স, ২৬ শহীদ নজরুল ইসলাম সড়ক (হাটখোলা), ওয়ারী, ঢাকা -১২০৩ থেকে প্রকাশিত ।
মোবাইল: ০১৭৯৮৬৫৫৫৫৫, ০১৭১২৪৬৮৬৫৪
ওয়েবসাইট : dailyjanadarpan.com , ই-পেপার : epaper.dailyjanadarpan.com
Copyright © 2025 Daily Janadarpan. All rights reserved.