আজ মঙ্গলবার, জানুয়ারি ৭, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ছিনতাই চক্রের উৎপাত বেড়েছে। প্রতিনিয়ত রাতের আধারে রোগীর স্বজনের কাছ থেকে টাকা, মোবাইলসহ মূল্যবান জিনিসপত্র হাতিয়ে নেয় চক্রগুলো। রোগীর চিকিৎসা নিয়ে দুঃশ্চিন্তার পাশাপাশি এমন অপরাধকে ‘মরার উপর খাড়ার ঘা’ হিসেবেই দেখছেন স্বজনরা।

পটুয়াখালী থেকে অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে ঢাকায় এসেছেন মাসুমা বেগম। ভর্তি করেছেন সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউতে)। স্বামীর শারীরিক অবস্থা নিয়ে যখন দুঃশ্চিন্তা তখন হাসপাতাল থেকেই চুরি হয়ে যায় মাসুমার মোবাইল ফোন। এরপর থেকেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন পরিবারের সাথে।

ভুক্তভোগী মাসুমা বেগম বলেন, চিকিৎসার জন্য এসে মোবাইল ফোন চুরি হয়ে যাওয়ায় চরম বিপদে পড়েছি। এক বিপদে হাসপাতালে এসে, অন্য আরেক বিপদে পড়েছি। এত বড় হাসপাতালে নিরাপত্তা নেই। সিসিটিভি ভেঙে ফোন নিয়ে গেছে।

মাসুমা বেগমের ছেলে সায়েম বলেন, আত্মীয়-স্বজন যারা আছেন সবাই হারিয়ে যাওয়া নাম্বারে ফোন দিয়ে পাচ্ছেন না। আমি বাইরে গেলে আব্বা আমাকে যে ফোন করে তার শারীরিক অবস্থার কথা জনাবে, সেই সুযোগও নেই।

হাসপাতালে চুরি ছিনতাইয়ের এমন ঘটনায় হতবাক কক্সবাজার থেকে আসা জামাল হোসেন। রোগীর সেবা বাদ দিয়ে এখন সাথে থাকা টাকা ও মূল্যবান জিনিস পাহাড়া দিতে নির্ঘুম রাত কাটে তার।

রোগীর স্বজন জামাল হোসেন বলেন, রোগীর থেকে সবচেয়ে বেশি টেনশন করতে হয়। কখন না জানি ফোন চুরি হয়ে যায়। এমনও হয়েছে আইসিইউতে ঢুকে আবার বের হয়ে আসছি, মোবাইলটা চুরি হয়ে গেলো কি না, এটা দেখার জন্য। এমন আতঙ্কের মধ্যে সারাক্ষণ থাকি।

প্রায় প্রতিদিনই এই হাসপাতাল থেকে মানুষের মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি হচ্ছে। হাসপাতালের অন্ধকার স্থানে ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটছে হরহামেশাই।

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা একজন রোগীর স্বজন বলেন, একজনকে ছুরি ধরে মোবাইল নিয়ে গেছে। আমাকে দেখে ধর ধর বলছে আাম চলে আসছি।

রোগীর স্বজন অন্য আরেকজন নারী বলেন, একজন ১০ হাজার টাকা নিয়ে যাচ্ছিলেন, ৪-৫জন ছিনতাইকারী তাকে লিফটে আটকে সেই টাকা নিয়ে চলে গেছে।

রাজধানীর এই মেডিকেলে প্রতিদিন গড়ে ২০ হাজার রোগী চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকে। যার মধ্যে বেশির ভাগই নিম্ন ও মধ্যবিত্ত। জনগুরুত্বপূর্ণ এমন জায়গা থেকে একের পর এক চুরি ছিনতাইয়ের ঘটনায় উদ্বিগ্ন সবাই।

একজন ছেলে বলেন, আইসিইউ থেকে দুইটি ফোন চুরি হয়ে গেছে। তবে অন্য একজন আঙ্গুল তুলেছেন সিকিউরিটি কর্মীদের ওপর। বলেন, নিশ্চিয়ই এখানে সিকিউরিটি কর্মীদের গাফিলতি আছে। তারা এর সঙ্গে জড়িত না থাকলে এই ধরণের কার্যকলাপ ঘটা সম্ভব না।

হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেলো, বেশির ভাগ সিসি ক্যামেরাই ভাঙা। কর্তৃপক্ষ বলছে, চুরি ছিনতাইয়ের ঘটনা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো: শফিউর রহমান বলেন, হাসপাতালের অভ্যন্তরে কিছু চুরির পরিমাণ বেড়ে গেছে। আমরা আমাদের আনসার কমান্ডারকে ডেকে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করেছি। পুরো হাসপাতাল সিসিটিভির আওতায় নিয়ে আসবো। রোগীদের অভ্যন্তরে নিরাপত্তা রক্ষার দায় আমাদের ওপর আছে। সেক্ষেত্রে আমরা সম্পূর্ণভাবে সজাগ আছি। সব মিলিয়ে আমাদের হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নতুন করে ঢেলে সাজাতে চাই।

শেরে বাংলা নগর থানায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ডিসেম্বরে আশপাশের হাসপাতাল থেকে মোবাইল চুরির ঘটনা জিডি হয়েছে প্রায় ৪০০। মামলা হয়েছে ৬টি।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ডিসি (মিডিয়া) তালেবুর রহমান বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অভ্যন্তরে নিরাপত্তার দিকে নজর দেন তাহলে অনেকাংশ এসব ঘটনা এড়ানো সম্ভব। যদি কোনো ভুক্তভোগী ঘটনার শিকার হন এবং অভিযোগটা আমাদের কাছে আসলে আমরা বিষয়টি দেখবো।

শুধু সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল থেকেই না, প্রতিনিয়ত চুরি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে রাজধানীর বেশিভাগ হাসপাতালেই। এমন পরিস্থিতি থেকে মুক্তি চায় হাসপাতালে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা।

Exit mobile version