আজ বুধবার, জানুয়ারি ৮, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

নাঈমার ছবি আঁকা ভীষণ পছন্দের। কিন্তু দরিদ্র সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তার বাবা হঠাৎ একদিন অসুস্থ হলে সবকিছু পাল্টে যায়। ছবি এঁকে যেহেতেু পয়সা পাওয়া যায় না, তাই বাধ্য হয়ে সেই নাঈমা রাস্তায় রিকশা নিয়ে বের হয়। তাকে সম্মুখীন হতে হয় নানা জটিলতার।

শিল্পমনা নারী নাঈমার গল্প ‘রিকশা র্গাল’। চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহে অমিতাভ রেজা চৌধুরী পরিচালিত এ সিনেমাটি দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেতে যাচ্ছে। সিনেমার মূল চরিত্র নাঈমার ভূমিকায় অভিনয় করছেন নভেরা। আমেরিকা ও বাংলাদেশের প্রথম যৌথ প্রযোজনায় কোনো পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা এটি।

সিনেমায় কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে নভেরা বলেন, ‘নভেরা থেকে নাঈমা হওয়ার জার্নিটি বেশ অদ্ভুত ছিল। মনে আছে, নিকেতনপাড়ার ভেতর আমি এক মাস রিকশা চালিয়েছি। আমার পেছনে ইডিরা বসে থাকতো আর আমি রিকশা চালাতাম। পড়াশোনার জন্য দেশের বাইরে অনেক বছর থাকতে হয়েছে। সিনেমায় কাজ করতে গিয়ে ঢাকাকে খুব গভীরভাবে দেখার সুযোগ হয়েছে। সবকিছুর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমার টিমের প্রতি। শুধু ঢাকা নয়, পাবনাতেও এর দৃশ্য ধারণ হয়েছে। সেখানের রাস্তার রিকশাওয়ালাদের সঙ্গে মিলেমিশে রিকশা চালিয়েছি। নির্মাতা, অভিনশিল্পী– সবার জন্য এটি কষ্টের প্রজেক্ট ছিল।’

‘রিকশা গার্ল’ মুক্তি পেতে যাচ্ছে। এটি নতুন বছরে দর্শকের জন্য বিশেষ উপহার। সিনেমাটি প্রথমে বিদেশি দর্শকরা দেখেছেন, এ নিয়ে আমাদের সবার মনে একটু ক্ষোভ ছিল। শেষমেশ দেশের দর্শকরা এটি দেখতে পাবেন ভেবে ভালো লাগছে। অপেক্ষার ফল সবসময়ই ভালো হয়। আশা করছি, সিনেমাটি দর্শকের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে’।

‘রিকশা গার্ল’ সিনেমাটি মুক্তি প্রসঙ্গে এভাবেই বললেন নভেরা রহমান। এর আগে নভেরা রুবাইয়াত আহমেদের ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ও মান্না হীরার ‘একাত্তরের ক্ষুদিরাম’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। ‘রিকশা গার্ল’ তার তিন নম্বর সিনেমা।

দেশের বাইরে বিভিন্ন উৎসবে সিনেমাটির প্রদর্শনী হয়েছে। নিউইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলেস, লন্ডন, জার্মানি ও দুবাইর শোতে উপস্থিত ছিলেন নভেরা। বিশেষ করে শিশুদের কাছ থেকে বেশি সাড়া পেয়েছেন তিনি।

নভেরা রহমানের বয়স যখন চার মাস, তখন তার মা মোমেনা চৌধুরী অভিনীত ‘দূরে কোথাও’ নামে একটি নাটকে অভিনয় করেছিলেন। নির্ধারিত শিল্পীর অনুপস্থিতিতে তাকে ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে হয়। মায়ের কোলেই ছিল প্রথম কাজ।

মা মোমেনা চৌধুরী নাট্যদল আরণ্যকে থাকায় মঞ্চের ভুবনেই বেড়ে উঠেছেন তিনি। সেই জায়গা থেকে থিয়েটার রক্তের মধ্যেই আছে। স্কুল-কলেজ শেষ করে এক সময় স্নাতকে পড়তে কানাডায় চলে যান তিনি। ওই সময় খুব শখ করে একটা থিয়েটার কোর্স নিয়েছিলেন। কোর্সটা ভালো লাগায় মঞ্চের প্রতি তার আলাদা দরদ তৈরি হলো।

‘রিকশা গার্ল’ সিনেমায় অভিনয়ের পর ক্যামেরার পেছনের কাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন নভেরা। অমিতাভ রেজার প্রতিষ্ঠান ‘হাফ অ্যান্ড ডাউন’ এ লাইন প্রডিউসার হিসেবে কাজ শুরু করেন। সেখান থেকেই তার প্রযোজনার যাত্রা শুরু হয়। এরপর লন্ডনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রডিউসিংয়ের ওপর মাস্টার্স শেষ করেন। পরে লস অ্যাঞ্জেলেসে পড়েছেন ক্রিয়েটিভ ডেভেলপমেন্ট নিয়ে। এখন তিনি প্রডিউসার হিসেবে বিজ্ঞাপনী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত আছেন। বিদায়ী বছরটি ভালোই গেছে নভেরার। পেয়েছেন ইউকের ভিসা। পড়ালেখার পাঠ চুকিয়েছেন। ঢাকায় এসে ভালো ভালো কিছু কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। নতুন বছরে জীবনে আরও ভালো কিছু কাজ যুক্ত হবে বলে প্রত্যাশা করছেন তিনি।

Exit mobile version