আজ মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ২৪, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সম্প্রতি ‘আন্তর্জাতিকভাবে সেনাবাহিনীর ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। ফিরছেন হাসিনা’ শীর্ষক শিরোনামে একাধিক পোস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে। যেখানে দেশীয় সংবাদমাধ্যম কালের কন্ঠের বরাত দিয়ে খবরটি প্রচার কড়া হয়েছে। তবে দেশীয় ফ্যাক্ট চেকিং সংস্থা রিউমর স্ক্যানার জানিয়েছে এমন খবর সত্য নয়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, আন্তর্জাতিকভাবে সেনাবাহিনীর ওপর নিষেধাজ্ঞা ও হাসিনার দেশে ফেরা সংক্রান্ত কোনো তথ্য জানিয়ে কালের কণ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করেনি। বরং, ব্লগস্পটের বিনামূল্যের ডোমেইন সাইটে কালের কণ্ঠের লোগো ব্যবহার করে ভুয়া এই দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।

ফেসবুকের যেসব পোস্টে এই দাবিটি প্রচার হচ্ছে সেসব পোস্টে মূলত কালের কণ্ঠের সূত্রই ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে কালের কণ্ঠ পত্রিকার ওয়েবসাইট এবং প্রিন্ট সংস্করণে সাম্প্রতিক সময়ে উক্ত দাবিতে কোনো সংবাদ প্রকাশের প্রমাণ মেলেনি। ইন্টারনেট আর্কাইভেও এ সংক্রান্ত দাবির কোনো সংবাদ কালের কণ্ঠের ওয়েবসাইটে প্রকাশের তথ্য পাওয়া যায়নি।

সাইটটির লোগো হিসেবে কালের কণ্ঠের লোগো ব্যবহার হলেও এর ইউআরএলে ব্যবহার হয়েছে আওয়ামী লীগের নাম। যার নাম দেয়া হয়েছে ডেইলি নিউজ বিডি আওয়ামী লীগ।

কথিত সংবাদটিতে দাবি করা হয়, ‘আজ ২২ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক আদালত থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নিকট একটি চিঠি এসেছে, যা বাংলাদেশের শান্তি মিশনে অংশগ্রহণ নিয়ে বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি করেছে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয় যে, যদি বাংলাদেশ ৩০ দিনের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং অবৈধ সরকার উৎখাতের পদক্ষেপ না নেয় তাহলে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনী পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে শান্তি মিশনে অংশগ্রহণ থেকে চিরতরে বাদ দেয়া হবে। এই ঘোষণার পর, সেনাবাহিনীর মধ্যে একটি অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। সেনাবাহিনী কী করবে? বাংলাদেশের ভবিষ্যত কী হবে? এই মুহূর্তে দেশের রাজনীতিতে ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে, বিশেষত সেনাবাহিনীর পদক্ষেপ নিয়ে।’

পরবর্তী আলোচনায় শেখ হাসিনার দেশে ফেরার সম্ভাবনাসহ প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন বিষয়ে মতামত ও মনগড়া তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক আদালত এবং বাংলাদেশে শান্তিরক্ষী দল পাঠানোর আলোচনা সম্প্রতি বেশ কয়েকবারই গণমাধ্যমে খবরে এসেছে। গত সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদরদফতরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রধান প্রসিকিউটর করিম খান। সে সময় জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের সময় গণহত্যার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে আইসিসিতে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা করার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন ড. ইউনূস।

ডেইলি স্টারের গত নভেম্বরের এক সংবাদ থেকে জানা যায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার মন্ত্রিপরিষদ এবং সহযোগীদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে নেদারল্যান্ডসের হেগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে অভিযোগ দায়ের করা হয় গত ২৮ অক্টোবর। এর আগে নভেম্বরের শুরুর দিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ৬২ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতে ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট-(আইসিসি)’-এর রোম সংবিধির ১৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অভিযোগ দায়ের করা হয়। এই অভিযোগ করেন সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, ব্যারিস্টার ও সলিসিটর নিঝুম মজুমদার, ব্যারিস্টার মনিরুল ইসলাম মঞ্জু ও গভ ওয়াইজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান এস শাকির উদ্দিন।

এসব সংবাদ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বর্তমান সরকার ও বিগত আওয়ামী লীগ সরকার সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো এসব অভিযোগে আসলেও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সংশ্লিষ্ট কোনো তথ্য এসব অভিযোগে উল্লেখ পাওয়া যায়নি। ফলে কোনো অভিযোগ বা মামলা ছাড়া এই আদালত থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কাছে চিঠি আসা অবান্তর। কালের কণ্ঠ ব্যতীত অন্যান্য গণমাধ্যমেও এমন কোনো তথ্য আসেনি।

অন্যদিকে, চলতি মাসের শুরুতে বাংলাদেশে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানোর দাবি জানিয়ে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার অধিবেশনে বক্তব্য দেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরবর্তী সময়ে এই বক্তব্যের ব্যাখ্যাও দেন তিনি।

ভারত-বাংলাদেশের মাঝে চলমান উত্তেজনা নিরসনে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়ে তখন তিনি জানান, আমি বলেছি এই কারণে যে, যখনই কোনো দেশে কোনো অস্থিরতা হয় বা শান্তি বিঘ্নিত হয়, তখন জাতিসংঘের নিজস্ব একটা শান্তিরক্ষী বাহিনী থাকে, যে ফোর্সে থাকে সারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের লোক। তাদের বলা হয় শান্তিরক্ষী বাহিনী। শ্রীলংকাতেও যখন গণ্ডগোল হয়েছিল, তখন শান্তিরক্ষী বাহিনী এসেছে। কাজেই ভারতের সঙ্গে একান্তই যদি (বাংলাদেশের) সম্পর্কের খুব অবনতি হয়ে থাকে, তাহলে ভারত সেক্ষেত্রে জাতিসংঘকে বলতে পারে যে, তোমাদের শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠাও। অন্তত মানুষ যাতে নিরাপত্তা পায়।

তবে এই বিষয়টি নিয়ে জাতিসংঘের বক্তব্য সম্বলিত কোনো সংবাদ দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে পাওয়া যায়নি।

Exit mobile version