মোঃ লিটন মিয়া গাজীপুর প্রতিনিধি
ভোটার আইডি কার্ডের হিসাব অনুযায়ী লূতফর শেখ মিয়ার বয়স ৯২। কিন্তু এলাকার অনেকের দাবি, তার বয়স আরও বেশি। এই বয়সেও নিজে হেঁটে মসজিদে যান। নিয়মিত নামাজ পড়েন, কোরআন তেলাওয়াতও করেন। তবে অবাক করার বিষয়, এই বৃদ্ধ এখনো খালি চোখে সব কিছু স্পষ্ট দেখতে এবং পড়তে পারেন, নিয়মিত পত্রিকাও পড়েন। সকাল হলে পত্রিকা আসার অপেক্ষায় থাকেন দেশের খবরাখবর পড়ার জন্য। বছরের পর বছর ধরে চশমা ছাড়াই খালি চোখে তেলাওয়াত করে আসছেন পবিত্র কোরআনের আয়াত। তিনি গোপালগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার খাটিয়াগড় গ্রামের মৃত ইজাহার উদ্দিন এর ছেলে। বর্তমানে তিনি গাজীপুর জেলার পূবাইল থানাধীন মিরের বাজারে তার মেজো ছেলে মনির এর সাথে বসবাস করছেন।
লূতফর শেখ বলেন, পাকিস্তানি শোষণ আর বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম দেখেছেন। বয়সের ভারে অনেক স্মৃতিই এখন তিনি ভালো করে বলতে পারেন না। কিন্তু ভেজালমুক্ত ভালো খাবার খেতে পারলে ভবিষ্যৎ ভালো বলে জানান এই বৃদ্ধ।
তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকেই হেঁটে হেঁটে চারদিক ছুটেছি। যুবক বয়সে ব্যবসা-বাণিজ্যের কাজে বেশিরভাগ সময় বিভিন্ন জায়গায় হেঁটে যাতায়াত করেছি।
লূতফর শেখ বলেন, যুবক বয়সে যেসব খাবার খেয়েছি, তার সবই ছিল ভেজালমুক্ত। নিজেদের বাড়ির গরুর দুধ, ডিম, ক্ষেতের শাক-সবজি, পুকুরের মাছ, সরিষার তেল, ঢেঁকি ছাটা চালের ভাত কত স্বাদ ছিল। সব খাবার ছিল একদম নির্ভেজাল। আর এখন সবই ভেজাল।
তিনি বলেন, এখন মানুষের মধ্যে ভেজাল, খাবারে ভেজাল, ওষুধে ভেজাল, আমাদের চারপাশটাই যেন ভেজালে পরিণত হয়েছে। এ কারণে মানুষের রোগবালাইও কমছে না। অথচ এই বয়সেও আমার কোনো অসুখ-বিসুখ নেই। আল্লাহর রহমতে ভালো আছি। মাঝে মধ্যে একটু জ্বর-সর্দি হয়। এছাড়া তেমন বড় কোনো সমস্যা হয়নি।
লূতফর শেখ বলেন, এখন তো ৬০ বছর বয়স হলেই আমাদের দেশের মানুষ মৃত্যুর প্রহর গুনতে শুরু করে। শুরু হয় নানা রোগবালাই। অনেকে হাঁটতেও পারেন না। কিন্তু আল্লাহর অশেষ রহমতে আমি এখনও প্রতিদিন ফজরের নামাজ পড়ি। ভোর থেকে খালি চোখেই পবিত্র কোরআনও পড়ে থাকি। কোরআন তেলাওয়াতের কারণে আল্লাহ আমাকে এখনও খালি চোখে সব কিছু দেখার শক্তি দিয়েছেন। আমার চোখে কোনো সমস্যা নেই। শুধু কানে একটু কম শুনতে পাই।
ব্যক্তি জীবনে সাত ছেলের জনক। লূতফর শেখ এর ছেলে মনির হোসেন বলেন, আমার বাবার বয়সী কোনো মানুষ আর এলাকায় নেই। এই বয়সেও আমার বাবা খালি চোখে কোরআন শরীফ নিয়মিত পড়ছেন, পত্রিকা পড়েছেন এটা একটা দৃষ্টান্ত। তার চলাফেরায় রয়েছে বেশ সতেজতা। মানুষের কল্যাণে সব সময় আল্লাহর কাছে কান্না করেন। তার মতো মানুষের জন্য আমাদের এলাকার মানুষ গর্ববোধ করেন।