জয়পুরহাট প্রতিনিধি
জয়পুরহাটের আক্কেলপুর থানার নওজোর গ্রামে পূর্ব শত্রুতার জেরে প্রতিপক্ষের অতর্কিত হামলায় বসতঘরে ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। গত শনিবার (৩০ নভেম্বর) রাত আনুমানিক ৮টায় নওজোর গ্রামস্থ মকবুলের বাড়ির সামনের রাস্তায় এ ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে হামলাকারীরা একত্রিত হয়ে কয়েকটি বাড়িতে একযোগে ভাংচুর ও লুটপাট করে। এতে ৮ লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। ভাংচুর ও লুটপাটে বাধা দিতে এলে তারা কয়েকজনকে এলোপাতাড়ি মারপিট করে গুরুতর আহত করে। এতে ৬ জন আহত হয়েছে। গুরুতর আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে মোঃ আজিজার মন্ডল (৬৮) আক্কেলপুর থানায় ২০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো ১৫-২০ জনের নামে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযুক্তরা হলেন- ১। মোঃ শাওন (২৩) পিতা- মোঃ বাবু, ২। মোঃ উজ্জল (৩০) পিতা-মৃত আবু তালেব, ৩। মোঃ বাবু (বোম) (৩২) পিতা- মৃত আত্তাব প্রাং, ৪। মোঃ জহুরুল ইসলাম (৪০) পিতা- মোঃ আঃ জব্বার, ৫। মোঃ মিন্টু (৩৩) পিতা- মৃত মোতাহার হোসেন, ৬। মোঃ খোকন (৩৩) পিতা- হরা, ৭। মোঃ মোজাহার (৫০) পিতা- মৃত তৈহির প্রাং, ৮। বজলু (৪৫) পিতা- আবুল প্রাং, ৯। মোঃ মাইনুল (২২) পিতা- গোলাম মোস্তাফা, ১০। মোঃ আমজাদ (৫০) পিতা-মৃত তৈহির প্রাং, ১১। মোঃ মিনাল (২১) পিতা- ফারুক, ১২। নাইম (২১) পিতা- মোঃ বজলু, ১৩। মোঃ আরাফাত (২০) পিতা- আস্ত, ১৪। রকি (২৫) পিতা- জনু, ১৫। বক্কর (২৫) পিতা- রেজাউল, ১৬ রাজু (৩০) পিতা- মতিন, ১৭। সাজু (৩৪) পিতা- হারুন, ১৮। নওশাদ (৩০) পিতা- বাবু, ১৯। রুবেল (৩৮) পিতা- আবু তালেব ও ২০। মোঃ সবুজ (৩৮) পিতা- মৃত মোসলেম সর্ব সাং-নওজোর থানাঃ আক্কেলপুর, জেলাঃ জয়পুরহাট।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ১নং ও ২নং বিবাদীর সাথে গত ৩০/১১/২০২৪ তারিখ রাত ৮টায় আক্কেলপুর থানাধীন নওজোর গ্রামস্থ মকবুলের বাড়ির সামনের রাস্তায় বসে থাকা শাওনের সাথে কথা কাটাকাটি ও তর্কবিতর্ক হয়। তখন ১নং ও ২নং বিবাদী ফোন করে আরো ৫/৬ জনকে ডেকে এনে সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে এলোপাথারিভাবে মোঃ শাওন (২১)কে মারতে শুরু করে। তখন শাওনের আর্তচিৎকারে আশেপাশে থাকা লোকজন এগিয়ে আসলে বিবাদীরা পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে একই দিন আনুমানিক রাত ১০টায় উপরোক্ত বিবাদীসহ ১৫-২০ জন দলবদ্ধ হয়ে হাসুয়া, লাঠি, চাপাতি নিয়ে মোঃ আজিজার মন্ডলের বসতবাড়ীতে অনধিকার প্রবেশ করে বাড়ীতে থাকা একটি ফ্রিজ, একটি টিভি, একটি লাল রংয়ের হিরো ১০০ সিসি মোটর সাইকেল, একটি ব্লু রংয়ের অপো ব্র্যান্ডের টাস ফোন, একটি ব্যাটারিচালিত চার্জার ফ্যান, একটি রাইচ কুকার সহ অন্যান্য আসবাবপত্র ও ঘরের দরজা জানালা ভাংচুর করে অনুমানিক দেড় লাখ টাকার ক্ষতিসাধন করে। ২নং বিবাদী শাওনের ব্যাগে থাকা ২ (দুই) ভরি ওজনের স্বর্ণের চেইন যার আনুমানিক মূল্য ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা এবং ৩নং বিবাদী ঘরের আলমারিতে রক্ষিত নগদ ২ লাখ টাকা চুরি করে নিয়ে যায়। ওই সময় যারা বাধা দিয়েছিল তাদের প্রত্যেকের বাড়িতে হামলা করে ভাংচুর করে ক্ষতি সাধন করে।
প্রথমে তারা ৫নং সাক্ষী মোঃ বেলাল (৬০) এর বাড়িতে অনধিকার প্রবেশ করে ৩ ও ৪নং আসামীর নেতৃত্বে অপরাপর আসামীরা ভাংচুর করে ক্ষতিসাধনের পর পর্যায়ক্রমে ১নং সাক্ষীর বাড়িতে একইভাবে অনধিকার প্রবেশ করে ৫ ও ৬নং আসামীসহ অপরাপর আসামীরা ভাংচুর করে ক্ষতিসাধন করে। ৭, ৮ ও ৯নং আসামীসহ অপারাপর আসামীগন মোঃ গোলাম হোসেন (৪৫) পিতা-মৃত তোজাম্মেল হোসেনের বাড়িতে অনধিকার প্রবেশকরে ভাংচুর করে ক্ষতিসাধন করে। এরপর ১৫, ১৬, ১৭ ও ১৯নং আসামিসহ অন্য আসামীরা মোঃ হাসানুজ্জামানের বাড়িতে বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে বাড়ির মেইন গেট ভেঙ্গে প্রবেশ করে দরজা, জানালা, থাই, পানির লাইন ভেঙ্গে আনুমানিক এক লক্ষ টাকার ক্ষতিসাধন করে।
১০, ১১ ও ১২নং আসামিসহ অন্য আসামীরা মোঃ মামুনুর রশিদ কাজির বাড়িতে প্রবশ করে তাকে ও তার বড় ছেলেকে মারধর করে ঘরের দরজা, বারান্দা ভাংচুর, বারান্দায় রাখা আলুর বীজসহ অনুমানিক ৫০ হাজার টাকার ক্ষতি সাধন করে।
১৩, ১৪, ১৮ ও ২০নং আসামীসহ অন্য আসামীরা মোঃ কামরুল ইসলামের (২১) বাড়িতে প্রবেশ করে ঘরের দরজা, জানালা ভাংচুর করে আনুমানিক ২০ হাজার টাকার ক্ষতিসাধন করে।
তাদের মারপিটের ফলে আহত হয়ে মোঃ আজিজার মন্ডল, মোঃ পিন্টু (৪০), মোঃ সোহেল রানা (৩৫), মোঃ শাওন (২১), মোঃ মামুনুর রশিদ (৫৫) ও কাজী মোঃ জনাব আলী গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা গ্রহন করেন।
ভুক্তভোগী আজিজার মন্ডলের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমার নাতির সাথে মোঃ বাবুর ছেলে শাওন ও মৃত আবু তালেবের ছেলে মোঃ উজ্জলের কথা কাটাকাটি ও তর্ক-বিতর্কের এক পর্যায়ে বিবাদীরা আমার নাতিকে মারতে থাকে। তখন আমার নাতির আর্তচিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে বিবাদীরা পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে বিবাদীরা আরো ১৫/২০ জন নিয়ে দলবদ্ধ হয়ে হাসুয়া, লাঠি, চাপাতি নিয়ে আমার বসতবাড়িসহ বাধাদানকারীদের বাড়িতে অনধিকার প্রবেশ করে আসবাবপত্র, ঘরের দরজা জানালা ভাংচুর করে। এতে আনুমানিক আট লাখ টাকার ক্ষতি হয়। এ ব্যাপারে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছি।
অভিযোগের ব্যাপারে থানায় মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে নাম্বার ব্যস্ত পাওয়া যায়।