আমীর মাওলানা সাদকে বিশ্ব ইজতেমায় আসতে দেয়া ও সাদপন্থীদের নির্বিঘ্নে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেয়ার দাবীতে, তাবলীগ জামাতের একাংশ প্রধান উপদেষ্টা, জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারকে চিঠি দিয়েছেন। সোমবার (২ ডিসেম্বর) তাবলীগের শুরা সদস্য মাওলানা আবু তাহেরের নেতৃত্বে নারায়ণগঞ্জ জেলা মার্কাজের তাবলীগ জামাতের মওলানা সাদের অনুসারীরা, নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে ওই চিঠি হস্তান্তর করেন তারা।
এসময় মাওলানা সাদকে বিশ্ব ইজতেমায় বাংলাদেশে আসতে দেয়া ও নারায়ণগঞ্জের মসজিদগুলোতে সাদপন্থীদের দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেয়ার দাবী জানান তারা।
চিঠিতে উল্লেখ করেন, দাওয়াত ও তাবলীগের কার্যক্রম সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ। আজ থেকে প্রায় একশত বছর আগে ভারতের দিল্লীস্থ নিজামুদ্দীন বাংলাওয়ালী মসজিদ হতে হযরত মাওলানা ইলিয়াছ (রহ:), রসুলুল্লাহ (সা:) ও ছাহাবা (রা:) এর তরীকার অনুসরণ, অনুকরণ-এ মেহনত শুরু করেন। বর্তমানেও উক্ত নিজামুদ্দীন বিশ্ব মার্কাজ মসজিদ হতে বিশ্ব আমীর হযরত মাওলানা সা’দ কান্দলভী (দা: বা:) এর মাধ্যমে এটি সমগ্র বিশ্বে পরিচালিত হচ্ছে এবং ক্রমাগত প্রচার প্রসার লাভ করছে। নিজামুদ্দীন বিশ্ব মার্কাজকে যাঁরা অনুসরণ করছেন তাঁরাই মূলত তাবলীগওয়ালা।
দাওয়াত ও তাবলীগের বিশ্ব আমীর হযরত মাওলানা সা’দ (দাঃ বাঃ) সম্পর্কে দেওবন্দ মাদ্রাসাকে উদ্ধৃত করে তথাকথিত মাওলানা জুবায়ের পন্থীগণ এবং তাদের প্ররোচনায় কিছু আলেম মিথ্যা বানোয়াট তথ্য ছড়িয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। প্রকৃত বিষয় হলো ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসার কিছু ব্যক্তির সাথে উনার মতপার্থক্য সৃষ্টি হয়েছিল। বিষয়টি মীমাংসা হয়ে গেছে মর্মে দেওবন্দ মাদ্রাসার সর্বোচ্চ কর্ণধার বিশ্ব বরেণ্য আলেম হযরত মাওলানা আরশাদ মাদানী (দাঃ বাঃ) গত ফেব্রুয়ারি’ ২৪ ইং মাসে বাংলাদেশে এসে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন উনার বক্তব্যের অডিও রেকর্ড আমাদের সংরক্ষণে আছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো দেওবন্দ মাদ্রাসা কখনোই হযরত মাওলানা সা’দ (দাঃ বাঃ) কে বাংলাদেশে আসতে বাধা দেওয়া বা উনাকে যারা আমীর মানেন তাঁদের মসজিদে আমল বন্ধ করা বা বাধা দেওয়ার কথা বলেননি। বরং দেওবন্দ মাদ্রাসার ৬৯৫১৮নং ফতোয়া হলো- (নিজামুদ্দীন মার্কাজওয়ালাদের যারা গোমরাহ বলবে সে নিজেই গোমরাহ)। এছাড়া দেওবন্দ মাদ্রাসার ৬৯১৫৮, ১৫৬১৩১, ১৬৫৩৯৫, ১৫২৬৮৭ নং ফতোয়াসমূহে (নিজামুদ্দীন মার্কাজের অনুসারীদের মসজিদে আমাল করতে বাধা দেওয়াসহ তাদের ব্যাপারে আপত্তিকর কথা বলার ব্যাপারে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে)। দেওবন্দ মাদ্রাসার ওয়েবসাইটে ফতুয়াসমূহ রয়েছে।
অপর বিশ্ব বরেণ্য আলেম পাকিস্তানের হযরত মাওলানা মুফতি ত্বকী উসমানী (দাঃ বাঃ) অক্টোবর’ ২৪ ইং মাসে সৌদি-আরবে অবস্থানকালে স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন তাবলীগের উভয় পক্ষই হক। তাহলে আসল তাবলীগওয়ালাদের মসজিদে আমাল বন্ধ করার জন্য যারা অপতৎপরতা চালাচ্ছে তারা ইসলাম দরদি নয় বরং সন্ত্রাসী।
এজন্য আমরা নারায়ণগঞ্জ জেলার দাওয়াত ও তাবলীগের সর্ব সাধারণ মুসুল্লিগন নিম্নবর্ণিত দু’টি বিষয়ে আপনার নিকট দাবী জানাচ্ছি
কোন প্রকার কারণ ছাড়াই দাওয়াত ও তাবলীগের বিশ্ব আমীর হযরত মাওলানা সা’দ (দা. বা.)-কে বাংলাদেশে নিঃশর্ত ভাবে আনতে হবে। বিগত ৭ বছর যাবৎ আমরা কোরআন ও হাদিসের আলোকে উনার মূল্যবান বক্তব্য শুনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি অথচ তিনি ইতিপূর্বে বিশ্ব ইজতেমার অনেক বৎসর যাবৎ প্রধান বক্তা ছিলেন এবং আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করতেন। তিনি বাধাহীনভাবে সারা বিশ্বে তাবলীগের কাজে ছফর করে চলেছেন। তাই এ বছর যাতে আমাদের বিশ্ব আমীর হযরত মাওলানা সা’দ (দা. বা.) অবশ্যই বাংলাদেশে আসতে পারেন সেজন্য আমরা জোর দাবী জানাচ্ছি।
বিগত ৭ বছর যাবৎ মাওলানা জুবায়ের-পন্থীগণ আমাদের মূলধারার সার্থীদের মসজিদে দাওয়াতের কাজ বন্ধ করার জন্য বিভিন্নভাবে একতরফা মারপিঠ, হত্যা ও জুলুম-নির্যাতন এবং কুৎসা রটানো ও অপপ্রচার চালাচ্ছে এবং মাদ্রাসার অবুঝ বাচ্চাদেরকেও ভুল বুঝিয়ে বিভিন্ন মসজিদ/মাদ্রাসা/মার্কাজ মসজিদ ও বিভিন্ন জেলায় এস্তেমার ময়দান দখল-হামলার কাজে ব্যবহার করছে, এমনকি বাবা ও ছেলের মাঝেও ফাটল সৃষ্টি করছে যা ইসলামি শরিয়ত, বাংলাদেশের সংবিধান ও প্রচলিত। আইনের সুষ্পষ্ট লংঘন। তাই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সুষ্ঠুভাবে বজায় রাখার স্বার্থে বাংলাদেশের সকল মসজিদে বাধাহীনভাবে ইসলামের দাওয়াত ও তাবলীগ জামাতের কাজ পরিচালিত হওয়ার ব্যাপারে সুস্পষ্ট আদেশ জারির জন্যও দাবী জানাচ্ছি।