আজ মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ২৪, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

নারায়ণগঞ্জে ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবেলায় সিটি করপোরেশন ও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের অবহেলার প্রতিবাদে সিভিল সার্জন কার্যালয়ে ঘেরাও করেছে গণসংহতি আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ’র নেতৃবৃন্দ। রোববার (১ ডিসেম্বর) শহরের চাষাঢ়া থেকে মিছিল নিয়ে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় ঘেরাও করে জেলা ও মহানগর গণসংহতি আন্দোলনের নেতাকর্মীরা।

এর আগে, সকাল ১০ টায় নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জমায়েত করেন গণসংহতি আন্দোলন। বিভিন্ন উপজেলা, ইউনিয়ন ও সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ডের নেতৃবৃন্দ সখানে সমাবেশে করেন। সমাবেশে আগত নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। এ সময় নারায়ণগঞ্জের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার করুণ পরিস্থিতি ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমালোচনা করা হয়। পরে সেখান থেকে মিছিল নিয়ে ঢাকা নারায়ণগঞ্জের সংযোগ সড়ক হয়ে সিভিল সার্জন কার্যলয়ে উপস্থিত হয়। কার্যলয়ে ঘেরাও করে সমাবেশ করেন তারা। এ সময় সিভিল সার্জন বরাবর ৯ দাবি পেশ করেন নেতৃবৃন্দ।

দাবিগুলো মধ্যে রয়েছে-সেবা পেতে অব্যবস্থাপনা ও হয়রানিমুক্ত শতভাগ সেবা নিশ্চিত করতে হবে, প্রয়োজনীয় ঔষধের পর্যাপ্ত মজুদ ও সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে, রোগ নির্ণয়ের সকল প্রকার টেস্ট হাসপাতালগুলোতে করার ব্যবস্থা করতে হবে, ডাক্তার (বেসরকারি খাতের) ফি এবং টেস্ট ফি কমাতে হবে, হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত বিশেজ্ঞ মেডিকেল অফিসার নিয়োগ করতে হবে, অবকাঠামো ও মেডিক্যাল যন্ত্রাংশের ঘাটতি পূরণে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহন করতে হবে, মুমূর্ষু রোগীদের জরুরি চিকিৎসার ক্ষেত্রে এম্বুলেন্স সার্ভিস সহজ করতে হবে, উপজেলা সদর হাসপাতালগুলোসহ জেলা সরকারি হাসপাতালে বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানি, ডায়াগনস্টিক, প্যাথলজি ও ক্লিনিকগুলোর দৌরাত্ম মুক্ত করা, নোংরা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও জরুরি অগ্নি নিরাপত্তাসহ পুরো হাসপাতাল কম্পাউন্ডে শতভাগ কমপ্লায়ান্স নিশ্চিত করতে হবে।

নেতৃবৃন্দ বলেন, নারায়ণগঞ্জের চিকিৎসা ব্যবস্থায় আমরা অনেক অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীন আচরণ লক্ষ্য করছি। যার উদাহরন ডেঙ্গু প্রতিরোধে সিটি কর্পোরেশনের ব্যর্থতা। যার খেসারত আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী দিচ্ছি। দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য। ডেঙ্গু চিকিৎসায় আমরা নারায়ণগঞ্জের সরকারী ২ টি হাসপাতালে সক্ষমতার ঘাটতি লক্ষ্য করেছি। কেবলমাত্র ডেঙ্গু নয়, যেকোন সাধারণ চিকিৎসায় নারায়ণগঞ্জবাসীর আশ্রয়স্থল হয়ে উঠার কথা ৩০০ শয্যা খানপুর হাসপাতাল এবং ভিক্টোরিয়া হাসপাতাল। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সাথে আমরা লক্ষ্য করেছি, বেসরকারি চিকিৎসা খাতকে সুবিধা দিতে সরকারী হাসপাতালগুলোকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই পেছন থেকে টেনে ধরা হচ্ছে। নিতান্ত বিপদে পড়ে এবং যারা একেবারেই অসহায় তারাই সরকারী হাসপাতাল ২ টিতে চিকিৎসা গ্রহণ করতে যান। আমরা প্রত্যাশা করি, ৩০০ শয্যা খানপুর হাসপাতাল এবং ভিক্টোরিয়া হাসপাতাল এই দশা থেকে বেরিয়ে আসবে। এবং আপনি তার জন্য উদ্যোগী এবং অগ্রণী ভূমিকা পালন করবেন। এই নাজুক এবং করুণদশা থেকে উত্তরণে আমাদের নিম্ন লিখিত প্রস্তাবগুলো যথাযথ গুরুত্ব এবং বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি।

ঘেরাও কর্মসূচিতে নারায়ণগঞ্জ জেলা গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়কারী তরিকুল সুজন বলেন, আমরা গত ৭ দিন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ড ও সিটি কর্পোরেশনের বাইরে বিভিন্ন এলাকায় ডেঙ্গু গণসচেতনতায় গণসংযোগ, পথসভা করি। এ সময় নাগরিকরা আমাদের জানিয়েছেন ডেঙ্গু প্রতিরোধে সিটি কর্পোরেশনের যথাযথ উদ্যোগ তারা দেখেন নি। এবং কার্যকর কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেন নি। সিটি কর্পোরেশন পুরোপুরি ব্যার্থতার পরিচয় দিয়েছে এবং ডেঙ্গু পরিস্থিতির কোনরূপ উন্নতি আমাদের কাছে দৃশ্যমান হয়নি। এখন যারা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে তাদের চিকিৎসায় সরকারি হাসপাতালগুলোর আন্তরিকতার অভাব রয়েছে। মাঝে মধ্যেই ডেঙ্গু পরীক্ষার কিট সংকট দেখা দিচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে নামেমাত্র বিশেষায়িত ডেঙ্গু ওয়ার্ড থাকলেও বেড, মেডিসিন ও মেডিকেল যন্ত্রাংশের পর্যাপ্ত নয়। আমরা সিটি কর্পোরেশন ও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগকে বলবো আপনারা মানুষের জানমাল রক্ষার্থে অবহেলা করেছেন। তাই ভুক্তভোগী মানুষজন আপনাদের এই অবহেলার জবাবদিহি চায়। জনগণের স্বাস্থ্য সেবার দায়িত্ব নিয়ে কোন ধরনের অবহেলা, ব্যর্থতা আমরা আশা করি না। নারায়ণগঞ্জবাসীর কাছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দায়বদ্ধ। তাদের ব্যর্থতার জন্য তারা অবশ্যই জনগণের কাছে জবাদিহিতা করবেন এবং জনগণকে স্বাস্থ্য বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে যথাযথ উদ্যোগ নিবেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যক্রমে আমরা সংক্ষুব্ধ। অবিলম্বে ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবেলায় দ্রুত কার্যক্রম পদক্ষেপ না নিলে আরও কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেয়ার হুশিয়ারি দেয় নেতৃবৃন্দ।

ঘেরাও কর্মসূচি চলাকালে নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ড. এ এফ এম মুশিউর রহমান তার কার্যলয় থেকে বের হয়ে আসেন। এ সময় তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষের বসবাস। প্রায় ৩ গুণ মানুষ বেশী বসবাস করে এখানে। ৩শ’ শয্যা হাসপাতাল নাম মাত্র, সেখানে ৩শ’ শয্যা নাই। সেখানে বিদ্যমান আছে ১৫০ শয্যা, তাও নির্মাণ কাজের কারণে ৩৮শয্যা তারা দিতে পারে নাই। তার মানে ১২০ থেকে ১৫০ শয্যা। ভিক্টোরিয়া হাসপাতাল ১শ’ শয্যা, সেখানে সেটা আছে। আপনাদের দাবির প্রতি সম্মান জানিয়ে বলছি, আমরা একেবারে কোন কিছু করিনি এটা কিন্তু সঠিক না। হাসপাতাল গুলোতে ডেঙ্গু পরীক্ষা চলছে। আজকে গণসংহতি আন্দোলন মুক্ত ভাষায় এই ব্যানার নিয়ে এখানে আসতে পেরেছেন, এটা হয়তো আসতে পারতেন না। কেউ না কেউ আপনাদের বাধা দিতো। বিগত যে ফ্যাসিস্ট ছিলো তারা ডেঙ্গু নিয়ে কোন দীর্ঘ পরিকল্পনা করে নাই। করোনার প্রতি যে দৃষ্টি দিয়েছে তারা, সে পরিমান দৃষ্টি ডেঙ্গুর প্রতি দেয় নাই। অথচ করোনা চলে গেছে, কিন্তু ডেঙ্গু বছরকে বছর রয়ে গেছে। সরকার আমাদের যে পরিমান বরাদ্ধ দেয় আমরা সেটুকু কাজই করি। গর্ভমেন্ট বলেছে ৫০টাকা করে হাসপাতালে পরীক্ষা হবে। আমরা কিন্তু তাই করছি। যেখানে বাহিরে ২ হাজার টাকা লাগে। আমরা আমাদের দিক থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।

Exit mobile version