আজ শুক্রবার, ডিসেম্বর ২৭, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের একদল আইনপ্রণেতা। দেশটির একটি আন্তদলীয় পার্লামেন্টারি গ্রুপ সতর্ক করে বলেছে, বাংলাদেশের পরিস্থিতি যেভাবে প্রতিনিয়ত অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে, তাতে যুক্তরাজ্য আরও একটি ‘বৈশ্বিক উত্তেজনায়’ জড়িয়ে পড়তে পারে। এ নিয়ে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামিকে সতর্ক করে একটি প্রতিবেদনও দিয়েছে তারা। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইন্ডিপেনডেন্টের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামিকে এই প্রতিবেদন দিয়েছে দ্য অল-পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ ফর দ্য কমনওয়েলথ (এপিপিজি)। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর বাংলাদেশে দুই হাজারের বেশি নৃশংসতার ঘটনার প্রমাণ পাওয়া গেছে এবং সতর্ক করে বলেছে যে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আইন ও বিচারব্যবস্থাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। এ ছাড়া শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশে ইসলামি চরমপন্থীদের উত্থানের বিষয়টি নিয়েও সতর্ক করেছেন তাঁরা।

এপিপিজির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে যেকোনো ধরনের অস্থিরতার প্রভাব পড়তে পারে যুক্তরাজ্যে। ২০২১ সালের জনশুমারি অনুযায়ী, ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে ৬ লাখ ৪৪ হাজার ৮৮১ জন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মানুষ আছেন, যা মোট জনসংখ্যার ১ দশমিক ১ শতাংশ।

শেখ হাসিনার সরকারের পতন যুক্তরাজ্য সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘মিনিস্টার’ টিউলিপ সিদ্দিকের ওপর প্রভাব ফেলেছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। বলা হয়েছে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর খালা। আর বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর নানা।

এপিপিজির চেয়ারম্যান কনজারভেটিভ পার্টির নেতা অ্যান্ড্রু রসিনডেল বলেছেন, ‘কমনওয়েলথের গুরুত্বপূর্ণ মিত্রদেশগুলোতে প্রভাব ফেলতে পারে, এমন বিষয়ে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে আমরা যে চেষ্টা চালাচ্ছি তারই একটি অংশ এই প্রতিবেদন। প্রতিবেদনে উঠে আসা বিষয়গুলো সরকারের পাশাপাশি বাংলাদেশ ও কমনওয়েলথের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দাতব্য সংস্থা ও অংশীজনদের কাছে তুলে ধরা হবে। আশা করা হচ্ছে, যেসব বিষয় প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে, সেগুলো ওয়েস্টমিনস্টার ও হোয়াইটহলে গুরুত্বের সঙ্গে শোনা হবে। প্রতিবেদনটি আইনপ্রণেতা ও নীতিনির্ধারকদের বিষয়গুলো বুঝতে সহায়তা করবে।’

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ‘সহিংসতা ও অস্থিতিশীলতার পরও গত আগস্টের শুরুতে শেখ হাসিনা সরকারের পতন অনেকের মনে খুশি ও আশার সঞ্চার করেছিল। কিন্ত আমরা এমন কিছু ঘটনার প্রমাণ পেয়েছি যেগুলো নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করেছে। আইনকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের সংস্কৃতি জরুরি ভিত্তিতে বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি মানবাধিকার ও আইনের শাসন সমুন্নত রাখতে হবে। এসব করতে ব্যর্থ হলে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য তা ভালো হবে না।’

এপিপিজি বলেছে, হত্যার অভিযোগে বাংলাদেশের সাবেক মন্ত্রী, এমপি, আওয়ামী লীগের নেতা, সাবেক বিচারক, শিক্ষাবিদ, আইনজীবী ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলার প্রমাণ আমাদের হাতে এসেছে। এত বিপুল সংখ্যায় এসব হত্যা মামলা হচ্ছে যে এসব মামলার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

আগস্টের শেষ নাগাদ বাংলাদেশে ১ হাজার মানুষ নিহত হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ছাত্রদের বিক্ষোভ থেকে শুরু হওয়া আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ও অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের তিন মাসের বেশি সময় পার হয়ে গেছে। কিন্তু এরপরও বাংলাদেশের কিছু কিছু জায়গায় নিরাপত্তা পরিস্থিতি খুবই বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।’

বিগত কয়েক মাসে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের নিশানা করে যেসব ঘটনা ঘটেছে, তা নিয়েও উদ্বেগ জানিয়েছেন ব্রিটিশ আইনপ্রণেতারা। পাশাপাশি তাঁরা বলেছেন, ‘কট্টর ইসলামপন্থীদের এখন ক্রমশ রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ও দৃশ্যমান হওয়ার মতো প্রমাণ আসতে শুরু করেছে।’

Exit mobile version