স্টাফ রিপোর্টার: বিগত কয়েক বছর আমাদের দেশের একশ্রেণীর ব্যবসায়ীদের মধ্যে অধিক মুনাফা লাভের প্রবণতা অনেক বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যার মধ্যে স্বপ্ন সুপার শপ(Shwapno Super Shop) এবং স্বপ্ন অনলাইন শপগুলোর নাম প্রতিনিয়ত বেশি আসছে।
জাপানের জাতীয় ফল পার্সিমন। পুষ্টিগুণে ভরপুর খেতে রসালো ও সুস্বাদু হওয়ায় এ ফলটির বাংলাদেশে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিভিন্ন ফলের দোকান, সুপার শপ ও অনলাইনে শপে ফলটি পাওয়া যাচ্ছে।
জানা যায়, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে জাপানের নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা হামলায় প্রায় দুই লাখ অধিবাসী অধ্যুষিত নগরটি ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়। কিছুদিনের মধ্যেই সেই বিরানভূমিতে যে উদ্ভিদ কুঁড়ি ফুটিয়ে পুনরায় জীবনের সূচনা করেছিল, সেটি ছিল পার্সিমন-বর্তমান জাপানের জাতীয় ফল।
এসিআই লজিস্টিক লি. ২০০৮ সালে বাংলাদেশে ‘কষ্টের টাকায় শ্রেষ্ঠ বাজার’ স্লোগান নিয়ে স্বপ্ন সুপার শপ ব্যবসা শুরু করে। প্রতিষ্ঠার এক বছরেই নানা অনিয়ম ও ভোক্তাদের সঙ্গে প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ওঠে। স্বপ্ন সুপার শপটি তার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে চলছে। কোন বাঁধাই যেন তাদের দমাতে পারছে না। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় রুপায়ন শপিং স্কয়ারের নিচ তলায় রয়েছে স্বপ্ন সুপার শপের একটি শাখা। বৃহস্পতিবার এ শাখায় জসীম নামে এক ক্রেতার ফল কিনতে গিয়ে থাই পার্সিমনের দামে চোখ আটকে যায় তার। ফলের পাশে নেমপ্লেটে দাম লেখা রয়েছে ১৯২১ টাকা। অথচ তিনি বসুন্ধরা রোডের পাশেই ফল দোকানে একই থাই পার্সিমনের দাম দেখেন ৯০০ টাকা করে। স্বপ্ন তে কেনো এত বেশি দাম এ বিষয়ে তিনি বিক্রেতা ম্যানেজারকে প্রশ্ন করলে তারা জানান, ‘এটা থাইল্যান্ডের জাতের পার্সিমন এজন্য দাম বেশি।’ পাশের ফল দোকানে ৯০০ টাকায় একই জাতের থাই পার্সিমন বিক্রি হচ্ছে জানালে বিক্রেতা ম্যানেজার কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।
এবিষয়ে ক্রেতা জসীমের সাথে কথা হলে তিনি জানান, ‘অন্য দেশগুলোতে যেখানে সুপার শপে পণ্য মেলে কম দামে, সেখানে বাংলাদেশে বেশি দামে কিনতে হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মুদি দোকানের চেয়ে সুপার শপ বা চেইন শপে কম দামে পণ্য মিললেও দেশে ‘ভালো মানের নামে’ উল্টো বাড়তি টাকা গুণতে হচ্ছে ক্রেতাদের। তার উপর যোগ হয় মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট।কিছুদিন পরপরই তাদের বিরুদ্ধে ভোক্তা প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের নানা অভিযোগ ওঠে এবং তা প্রমাণিতও হয়। তারপরও এরা যে কবে ঠিক হবে আমাদের মতো সাধারণ ক্রেতাদের তা জানা নেই।’
অনুসন্ধানে জানা যায়, শুরুতে একটি মাত্র শাখা নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে এ সুপার শপটি দেশের বিভিন্ন জায়গায় শাখা খুলেছে। এরমধ্যে ঢাকাতেই সর্বাধিক প্রায় ৫০টিরও বেশি শাখা রয়েছে।অভিযোগ আছে, ভোক্তা প্রতারণার শীর্ষে রয়েছে স্বপ্ন।ফরমালিনযুক্ত মাছ এবং বিদেশি নামে দেশের তৈরি অনুমোদনহীন স্ট্যান্ডার্ড মার্ক (বিএসটিআই সিল) ব্যবহার করে পণ্য বিক্রি করে থাকে তারা। আর এ অপরাধে স্বপ্নের বেশ কয়েকবার জরিমানাও করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
বর্তমানে পৃথিবীর প্রতিটি দেশেই নিরাপদ খাদ্যকে ভোক্তার অধিকার হিসেবে গণ্য করা হয় এবং এর ব্যত্যয় দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ ক্ষেত্রে আমাদের দেশও ব্যতিক্রম নয়। আমাদের দেশে ২০০৯ সালে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন প্রণীত হয় এবং ২০১৩ সালে নিরাপদ খাদ্য আইন প্রণীত হয়।ব্যবসায়ীদের যেসব কাজ ভোক্তা অধিকার বিরোধী কাজ হিসেবে গণ্য হবে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ সেসব কাজের বিস্তারিত বিবরণের প্রথম যে পয়েন্টটি রয়েছে তা হলো, “কোনো আইন বা বিধির অধীন নির্ধারিত মূল্য অপেক্ষা অধিক মূল্যে কোনো পণ্য, ঔষধ বা সেবা বিক্রি করা বা করতে প্রস্তাব করলে।”
তাই বলা যায় এসব কর্মকাণ্ড চোখে পড়লে বা নিজে ফেস করলে অবশ্যই ভোক্তা অভিযোগ কেন্দ্র অভিযোগ করতে হবে।