ঐতিহাসিক ৫ আগস্ট। দুপুর দেড়টার দিকে আইএসপিআর থেকে বার্তা আসে, দুপুর ২টায় সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। সবার চোখ টিভির দিকে। ২টা পেরিয়ে যায়।
আইএসপিআর আবার জানায়, সেনাপ্রধান বিকেল ৩টায় ভাষণ দেবেন। আগের দিনও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় শতাধিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। কারফিউ উপেক্ষা করে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ দাবিতে ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে উত্তাল দেশ। সকাল ১১টার পর থেকে শাহবাগ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট লোকারণ্য।
ছাত্র-জনতার গন্তব্য কড়া নিরাপত্তাবেষ্টিত গণভবন। সারা দেশে উত্কণ্ঠা। ব্যাপক রক্তপাতের আশঙ্কা। অবশেষে স্বস্তির খবর।
বিকেল ৪টার দিকে সেনাপ্রধান জানালেন, প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। বললেন, ‘আমাদের সহযোগিতা করেন। কথা দিচ্ছি, প্রতিটি হত্যার বিচার হবে। আশাহত হবেন না। আমরা দায়দায়িত্ব নিচ্ছি।
সেনাবাহিনী, সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি আস্থা রাখুন। সব দাবি পূরণ হবে। দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। আমরা মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে যাব। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের বিষয়ে উনার সঙ্গে কথা বলব। তার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করে দেশ পরিচালনা করা হবে। ’
আজ ২১ নভেম্বর পালিত হতে যাচ্ছে সশস্ত্র বাহিনী দিবস। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর প্রথম এই দিবসটি পালন করা হচ্ছে। দিবসটিতে ৫ আগস্ট ও তার পরে সেনাবাহিনী প্রধান, সেনাবাহিনী এবং সার্বিকভাবে সশস্ত্র বাহিনীর জনগণের পক্ষে অবস্থান নিয়ে প্রশংসনীয় ভূমিকার বিষয়টি সচেতন মহল স্মরণ করছে। কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করা হচ্ছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার পাশে দাঁড়ানো সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সব সদস্যকে। তাদের মূল্যায়ন, সেনাবাহিনী প্রধান নৌ ও বিমানবাহিনী প্রধানদের এবং তার সহযোগী অন্যান্য সামরিক কর্মকর্তার সঙ্গে সম্মিলিতভাবে দেশের ক্রান্তিকালে সাহসী ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিয়ে যেভাবে দেশ ও জনসাধারণের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন, জন-আকাঙ্ক্ষার প্রতি সম্মান জানিয়েছেন, তাতে সশস্ত্র বাহিনী আবারও দেশের জনগণের আস্থার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে সেনাপ্রধান তথা সেনাবাহিনীর ভূমিকা অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে ইতিহাসে। ফ্যাসিবাদের পতন ঘটাতে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেনাবাহিনী। গৃহযুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করেছে দেশ ও জাতিকে।
গত ৬ অক্টোবর সেনাবাহিনীর সদর দপ্তরে ‘সেনা সদর নির্বাচনী পর্ষদ ২০২৪’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসও একই মূল্যায়ন করেন। তিনি বলেন, ‘দেশের ক্রান্তিলগ্নে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে এবং একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে দেশকে এক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির হাত থেকে রক্ষা করেছে। ফলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আবারও দেশের মানুষের কাছে আস্থার প্রতীক হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। ’
সেনাবাহিনী আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালাবে না, জনগণের পাশে থাকবে—এই বার্তা ৩ আগস্টই ছড়িয়ে পড়ে। ওই দিন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সেনা সদরের হেলমেট অডিটরিয়ামে ‘অফিসার্স অ্যাড্রেস’ গ্রহণ করেন। এ সময় তিনি সেনা কর্মকর্তাদের উদ্দেশে দেশের চলমান নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপর আলোকপাত করে সেনাবাহিনীর কার্যক্রম সম্পর্কে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা এবং তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের জনগণের আস্থার প্রতীক। জনগণের স্বার্থে এবং রাষ্ট্রের যেকোনো প্রয়োজনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সব সময় জনগণের পাশে আছে এবং থাকবে। নির্বাহী আদেশ ছাড়া যেকোনো উসকানির মুখেও ছাত্র ও সাধারণ জনগণের দিকে গুলি না ছুড়তে তিনি সেনা সদস্যদের নির্দেশ দেন। এ ছাড়া সেনা কর্মকর্তাদের উদ্দেশে জানান, সেনাবাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কিছু সতর্কীকরণ ফায়ার করলেও তাতে কোনো নিহতের ঘটনা ঘটেনি।
জানা যায়, ওই দিন সেনাপ্রধান তরুণ সেনা কর্মকর্তাদের কাছে দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে তাদের মতামত জানতে চান এবং স্পষ্ট করে বলেন, ‘এখন থেকে আর কোনো গুলি নয়। ’
সাবেক সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসান নাসির (অব.) এ প্রসঙ্গে বলেন, সেনাবাহিনীর জুনিয়র লেভেলের অফিসাররা ছাত্র-জনতার বিপক্ষে অবস্থান নিতে চাননি। তাদের মনোভাব সেনাপ্রধানের সিদ্ধান্ত নেওয়াকে সহজ করে। আলটিমেটলি সেনাপ্রধানকেই সঠিক সিদ্ধান্তটি নিতে হয়।
সেনাবাহিনীর ১৩ লং কোর্সে সেনাপ্রধানের কোর্সমেট ছিলেন মেজর জাবের (অব.)। তিনি বলেন, ‘জেনারেল ওয়াকার ছাত্র-জনতার ওপর গুলি করার আদেশ মেনে নিতে পারেননি। তাকে আমরা যেভাবে জানি, এ ধরনের হত্যাকাণ্ডে সমর্থন দেওয়া তার পক্ষে সম্ভব না। আমাদের জানা মতে ১৭ জুলাইয়ের পর থেকেই এ আদেশ নিয়ে তিনি চাপের মুখে ছিলেন এবং এ কারণেই তিনি ছাত্র-জনতার ওপর গুলি না চালাতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন। ’
গত ১৪ সেপ্টেম্বর রাজধানীর রাওয়া কমপ্লেক্সে ‘জুলাই-আগস্ট ২০২৪ বিপ্লবে সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা’ শীর্ষক এক সেমিনারে সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তারা বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে গণ-অভ্যুত্থানে সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা অগ্রভাগে ছিল। ছাত্র-জনতার পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনীর বর্তমান ও সাবেক সদস্যরাও এই বিপ্লবের অংশীদার।
৫ আগস্ট জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার আগে সেনাপ্রধান আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসর দলগুলোর বাইরের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেন। তিনি তার ভাষণে বলেন, ‘দেশে একটা ক্রান্তিকাল চলছে। সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। আমরা সুন্দর আলোচনা করেছি। সেখানে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হবে। এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে দেশের সব কার্যক্রম চলবে। ’
অনেকের মতে, সেনাপ্রধানের ত্বরিত ও সঠিক সিদ্ধান্তের কারণেই শেখ হাসিনার পতনের পর মব জাস্টিসের ঘটনা ব্যাপকতা পায়নি। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের একসময় আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে দলের কয়েক লাখ নেতাকর্মী মারা যেতে পারেন। কিন্তু তেমনটি ঘটেনি। গত ১৮ আগস্ট আইএসপিআরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে সারা দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়। এ সময় প্রাণনাশের আশঙ্কায় কতিপয় রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ বিবিধ নাগরিকগণ সেনানিবাসে আশ্রয় প্রার্থনা করেন। এ প্রেক্ষিতে বিচারবহির্ভূত কর্মকাণ্ড রোধ, জীবন রক্ষা ও আইনের শাসন সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে জীবন বিপন্ন ২৪ জন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, ৫ জন বিচারক, ১৯ জন অসামরিক প্রশাসনের কর্মকর্তা, ২৮ জন পুলিশ অফিসার, ৪৮৭ জন পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্য, বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাসহ বিবিধ ১২ জন ও ৫১ জন পরিবার-পরিজনসহ (স্ত্রী ও শিশু) সর্বমোট ৬২৬ জনকে বিভিন্ন সেনানিবাসে আশ্রয় প্রদান করা হয়। ’
আইএসপিআর আরো জানায়, ‘পরিস্থিতির উন্নতি সাপেক্ষে ৬১৫ জন স্ব উদ্যোগে সেনানিবাস ত্যাগ করেন। আশ্রয় প্রদানকৃত ব্যক্তিদের মধ্য থেকে এ পর্যন্ত চারজনকে তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ বা মামলার ভিত্তিতে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বর্তমানে আশ্রয়প্রাপ্ত তিনজন তাদের পরিবারের চারজন সদস্যসহ মোট সাতজন সেনানিবাসে অবস্থান করছেন। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে সব তথ্য দেওয়া হয়েছে। ’
সেনাপ্রধান গত ২৪ সেপ্টেম্বর রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে সামরিক বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত করার একটি রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে বলে জানান। এ ছাড়া তিনি বলেন, ‘এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় উত্তরণ হওয়া উচিত। এই সময়সীমার মধ্যে আমাদের একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করা উচিত। ’ ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনে যেকোনো পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন দেওয়ার কথাও জানান তিনি। একই সঙ্গে তিনি ধৈর্য ধরার প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দেন । বলেন, ‘আমি তাকে (ড. ইউনূস) সমর্থন করব, পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন। যেন তিনি তার কাজ সম্পন্ন করতে পারেন। ’ এ ছাড়া তিনি জানান, তার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ করবে না।
অভ্যুত্থানের পর সেনাবাহিনীর কয়েকটি উচ্চ পদে রদবদল আসে, কয়েকজনকে চাকরিচ্যুত করা হয়। জেনারেল ওয়াকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালগুলোতে আন্দোলনে আহত রোগীদের বিনা মূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। গত ১২ নভেম্বর সামরিক হাসপাতালের কমান্ড্যান্ট ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মশিউল মুনীর গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত দুই হাজার ১১২ জন রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছি। এর মধ্যে ৫৮২ জন রোগীর অপারেশন ছিল গুরুতর এবং ভালো হয়েছে। আবার একই সঙ্গে দুঃখের বিষয়, আমরা ছয়জনকে বাঁচাতে পারিনি। ’
তিনি আরো বলেন, ‘সেনাপ্রধান আমাকে এক কোটি টাকা দিয়েছেন। আমরা সমাজকল্যাণ ফান্ড থেকে চার হাজার করে টাকা দিয়েছি। যাদের হুইলচেয়ার দরকার ছিল, তাদের আমরা হুইলচেয়ার কিনে দিয়েছি। আমাদের সামান্য সক্ষমতা ছিল, সেই সক্ষমতা দিয়ে চেষ্টা করেছি। এটা আমাদেরকে অনেক বড় একটা স্যাটিসফেকশন দেয়। এ ছাড়া সেনাপ্রধান আদেশ দিয়েছেন, আমরা কিছু রোগীকে চিকিত্সার জন্য চায়না মিলিটারি হসপিটালে পাঠাব। আবার কেউ যাবে সিঙ্গাপুরে, কেউ যাবে থাইল্যান্ডে। ’
অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে শিল্প-কারখানাগুলোর নিরাপত্তার বিষয়ে ভরসার স্থল হয়ে দাঁড়ান সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। গত ৮ আগস্ট ঢাকায় সেনা সদরে তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ীরা। এ সময় তারা শিল্প ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহযোগিতা চান। জবাবে দেশের সব নাগরিকের পাশাপাশি ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রের অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবেন বলে ব্যবসায়ী নেতাদের আশ্বস্ত করেন সেনাপ্রধান। বলেন, ‘শিল্পপ্রতিষ্ঠান, সাপ্লাই চেইন ও বন্দরের নিরাপত্তা এবং দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নির্বিঘ্ন বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা নিশ্চিত করার জন্য সেনাবাহিনী সর্বদা তত্পর আছে। ’
অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে দেশে হঠাৎ বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলা, পুলিশ সদস্যদের ‘ভগ্ন মনোবল’ পরিস্থিতিতে দেশের আইন-শৃখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান পরিচালনা, মাদকবিরোধী অভিযান—এসব কাজেও সেনাবাহিনীর নিরলস চেষ্টা জনমনে অনেকটাই স্বস্তি ফিরিয়ে এনেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
গত মাসে সেনাপ্রধানের গুরুত্বপূর্ণ সফর ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায়। এই সফরের সময় ১৭ অক্টোবর সেনাপ্রধান নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে জাতিসংঘের ডিপার্টমেন্ট অব পিস অপারেশনস বিভাগের আন্ডারসেক্রেটারি জেনারেল জিন পিয়ের ল্যাক্রোইক্স, ডিপার্টমেন্ট অব অপারেশনাল সাপোর্ট বিভাগের আন্ডারসেক্রেটারি জেনারেল অতুল খারে, জাতিসংঘের মানবাধিকারসংক্রান্ত হাইকমিশনের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল ইলজে ব্রান্ডসকেহরিস এবং মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া ও প্যাসিফিক বিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ খালেদ খেয়ারির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হন। এ সময় তিনি র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নে (র্যাব) প্রেষণে নিয়োজিত থাকাকালে সেনাবাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের শান্তি রক্ষা মিশনে নির্বাচিত না করার বিষয় সবাইকে অবহিত করেন। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চলমান কর্মকাণ্ডের ওপর আলোকপাত করেন।
জেনারেল ওয়াকারের নির্দেশে গুমের অভিযোগ বিষয়ে সেনাবাহিনীতে একটি তদন্ত আদালত গঠন করা হয়েছে বলেও জানা যায়।
গত ১৩ নভেম্বর সেনাবাহিনীর কার্যক্রম সম্পর্কিত সংবাদ সম্মেলনে সেনা সদরের কর্নেল স্টাফ কর্নেল ইন্তেখাব হায়দার বলেন, ‘মানবাধিকার লঙ্ঘন বা বিচারবহির্ভূত হত্যা প্রতিরোধ করার ব্যাপারে সেনাবাহিনী অত্যন্ত সচেতন। এ ব্যাপারে আমাদের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের নির্দিষ্ট আদেশ রয়েছে যে কোনো ধরনের পরিস্থিতিতে যেন সেনাবাহিনী বিচারবহির্ভূত হত্যা সংঘটিত হতে না দেয়। সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে এটা প্রতিরোধ করার। ’
তিনি আরো জানান, শিল্প খাতে এ পর্যন্ত ছয় শতাধিক শ্রমিক অসন্তোষের (আনরেস্ট) ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে শুরুর দিকের ঘটনার অনেকগুলো ছিল সহিংস। তাদের সঙ্গে অবশ্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী অন্যান্য বাহিনীও ছিল। তারা যদি সময়মতো গিয়ে তাদের (শ্রমিক) শান্ত করার ব্যবস্থা না করতেন, এর থেকে অনেক বেশি ঘটনা ঘটতে পারত।
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছি। পুলিশের কাছে অপরাধের যে তথ্য থাকে, তা নিয়ে আমরা একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ করিয়েছি। সে অনুযায়ী, সেনাবাহিনী মোতায়েন হওয়ার পরে এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা পাওয়ার পরে আগের তুলনায় অপরাধের সংখ্যা কমেছে। নথিভুক্তি কমেছে। তার মানে পরিস্থিতির অবনতি হয়নি। আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়তো উন্নতি হয়নি, তবে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরো ভালো হবে বলে আমরা আশা করছি। ’
গত মঙ্গলবার ৭ পদাতিক ডিভিশন ও বরিশাল এরিয়া পরিদর্শনকালে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সেনা কর্মকর্তাদের জানান, সেনাবাহিনী দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে অর্পিত দায়িত্ব আন্তরিকতার সঙ্গে পালন করায় অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। দেশের সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় সব সেনা সদস্যকে ধৈর্য ও পেশাদারির সঙ্গে বেসামরিক প্রশাসন এবং দেশের জনসাধারণকে সর্বাত্মক সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।