
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মুখে ভারতে পালিয়ে যান টানা সাড়ে ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ৮ আগস্ট ড. মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। গত ১৬ নভেম্বর শনিবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ১০০ দিন পূর্ণ হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিনে সফলতা ও ব্যর্থতা মুল্যায়ন করা কঠিন। কারন, সফলতা ও ব্যর্থতা মুল্যায়ন করার জন্য ১০০দিন খুবই কম সময়। তারপরও এই সময়ে মুল্যায়ন করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ সময়ের মধ্য সরকারের যেমন সফলতা রয়েছে তেমনি ব্যর্থতাও রয়েছে। যা মানুষের আস্থা পুরনে অন্তরায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে, বাহিনীগুলোর সংস্কারে এই সরকার সফলতা দেখাতে পারে নাই, সাধারন মানুষের হাতের নাগালে এখনো আনতে পারেনি দ্রব্যমুল্য, মূল্যস্ফীতি ও দুর্নীতি দূর করা ও রাজনৈতিক দলের সংস্কারের ক্ষেত্রে এখনও গুণগত পরিবর্তন আনতে পারেনি অন্তর্বর্তী সরকার। বিশ্লেষকরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিনে অনেকগুলো সমস্যা এখনো সমাধান হয়নি। যার মধ্যে রয়েছে, কর ছাড় দিয়েও নিত্যপণ্যের দাম কমানো যাচ্ছে না। পুলিশ ও আনসার বাহিনীতে শৃঙ্খলা ফেরেনি, জনপ্রশাসনে শুদ্ধি অভিযান শেষ হয়নি, রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কার করা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, আমাদের সমাজের প্রতিটি কর্নারে গভীরভাবে জেঁকে বসেছে নিত্য দ্রব্যমূল্য সন্ত্রাস। নিত্যপণ্যের বাজার একবারেই অস্বাভাবিক ও অস্থির। নিত্যপণ্যে বাজারের উপর পতিত আওয়ামী সরকার তিনবছর আগেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছিল। তারা সেটি গোপন করে গণমাধ্যমে ভিন্ন বিষয় উস্থাপন করে পার পেতে চেয়েছিল। ফলে দরিদ্র, নির্ভরশীল ও নিন্মআয়ের মানুষের সাথে বিগত সরকারের চরম দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। ডিম ও গোলআলু এই দুটি গোলাকার পণ্য বাজারে সর্বপ্রথম গোলমাল সৃষ্টি করেছিল। চিনি, ভোজ্যতেল, চাল সবকিছুর বাড়তি মূল্য একসময় ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতাকে হারিয়ে হতাশ করে তুলেছিল। সেই কষ্টকর পরিস্থিতি থেকে দ্রুত মুক্তিলাভের আশায় উপর পর্যায় থেকে দ্রব্যমূল্য নির্দিষ্ট করে দিয়ে দৈনিক মনিটরিংয়ের মাধ্যমে সুষ্ঠু-সুলভ মূল্যনিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার আশা করছিলেন। সাধারণ জনগণ বর্তমান অন্তবর্তী সরকারের দিকে তাকিয়ে ১০০তম দিন পার করে দিলেও তাদের সে আশায় গুঁড়েবালি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নিত্যপণ্যের শুল্ক প্রত্যাহরেও বাজারে তার দাম কমছে না। কারণ বাজারের বিক্রেতা ও তাদের সরবরাহকারীদের চেতনার সাথে চরম সমন্বয়হীনতা বিদ্যমান রয়েছে। এছাড়াও প্রশাসনকে ঢেলে না সাজানোর কারণে পদেপদে তার খেসারত দিতে হচ্ছে। এদিকে জনগণের অনুভূত প্রয়োজন মেটানোর জন্য সংস্কার কাজ হাতে নেয়া হয়নি। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্তদের জন্য সরকারী সাহায্য, টেষ্ট রিলিফ, শহর কেন্দ্রিক টিসিবি-র কিছু ওপেন মার্কেট দিয়ে বিশাল সাহায্যপ্রার্থী জনগোষ্ঠীর মৌলিক চাহিদার অতি সামান্য অংশ সমাধান করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখাও ক্রমান্বয়ে কঠিন হয়ে উঠেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের এক মাস না পেরুতেই পোশাক কারখানার শ্রমিকদের নিয়ে প্রতিবিপ্লব শুরু হয়েছিল। যেটা অদ্যাবধি এই সরকারে পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আসছে। এই সরকারের সমস্যার আরেকটি বড় ক্ষেত্র হলো- বিগত স্বতঃস্ফূর্ত ছাত্র-জনবিপ্লবের সময় আহত-নিহতদের জন্য জন্য শক্তিশালী নীতি গ্রহণে ঢিলেমি করা। আন্দোলনের অব্যবহিত পরে সরকার গঠনের সাথে সাথে নিহতদের সাথে আহতেদের সঠিক পরিসংখ্যান তৈরীর ব্যবস্থা করার চিন্তা মাথায় আসেনি। বিগত আন্দোলনে কতজন কিভাবে আহত হয়েছিলেন তার কারণও জানা যায়নি। এছাড়াও প্রতিদিন ভয়াবহ যানযটের কবলে পড়ছে মানুষ। পরিশেষে সরকারের সামনে এখন চ্যালেঞ্জ দ্রুত সংস্কার শেষে নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণা।