আজ
|| ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ২১শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
দেনায় জর্জরিত পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন এখন দায়মুক্ত
প্রকাশের তারিখঃ ৬ নভেম্বর, ২০২৪
দেনার ভারে জর্জরিত জ্বালানি খাতের প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) এখন দায়মুক্ত। ডলারসহ অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও সংস্থাটি জ্বালানি তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে বিপুল অঙ্কের বকেয়া শোধ করেছে। কমবেশি প্রায় ৫০ কোটি ডলার সব সময়ই বকেয়া থাকত রাষ্ট্রীয় এই সংস্থাটির। এর মধ্যে ২৫ কোটি ডলার বকেয়াকে স্বাভাবিক ধরে নিয়েই লেনদেন করত বিপিসি। তবে এবার ওই দায়ও তারা শোধ করেছে।
অর্থনীতির এমন অস্থিরতার মধ্যে বিপিসিকে দায়মুক্ত রাখার ঘটনাকে অনেকটা নজিরবিহীন হিসেবেই দেখছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানো হাসিনা সরকারের রেখে যাওয়া বিপুল পরিমাণ বকেয়ার কারণে বেশ চাপেই পড়ে সংস্থাটি। তবে ত্বরিত এই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বিপিসিকে দায়মুক্ত করার ফলে সামনে জ্বালানি নিরাপত্তা আরও সুরক্ষিত হবে বলেও জানান তারা।
জানা যায়, ডলার সংকটের কারণে জ্বালানি তেল সরবরাহকারী বিদেশি কোম্পানিগুলোর পাওনা নিয়মিত পরিশোধ করা যাচ্ছিল না। দ্রুত পাওনা পরিশোধে বিপিসিকে চাপে রেখেছিল তেল সরবরাহকারী কম্পানিগুলো। এমনকি বকেয়া পরিশোধ না করলে তারা বাংলাদেশে জ্বালানি সরবরাহ করবে না বলেও বিপিসিকে হুমকি দেয়। একইসঙ্গে কোম্পানিগুলো বিলম্ব বিল পরিশোধের সুদও দাবি করে। এ অবস্থায় নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি তেল সরবরাহে ঝুঁকি তৈরি হয়।
গত জুলাইয়ে বিপিসির নতুন চেয়ারম্যান মো. আমিন উল আহসান দায়িত্ব গ্রহণ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে বকেয়া কমিয়ে আনতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেন। সরকারি ব্যাংকের পাশাপাশি বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এলসি করা হয়। চেয়ারম্যানের প্রচেষ্টা এবং অন্তর্বর্তী সরকারের সার্বিক সহযোগিতায় মাত্র তিন থেকে চার মাসেই বকেয়ার পরিমাণ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা হয়। এতে তেল সরবরাহকারী বিদেশি কম্পানিগুলোর কাছে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে।
বিপিসির সূত্রে আরো জানা যায়, বর্তমানে বিপিসিকে সরকার টু সরকার (জিটুজি) পদ্ধতিতে জ্বালানি তেল সরবরাহ করছে ৯টি প্রতিষ্ঠান—এমিরেটস ন্যাশনাল অয়েল কম্পানি, ইন্দোনেশিয়ার বিএসপি, ইউনিপেক, পেট্রো চায়না ইন্টারন্যাশনাল, ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন, পিটিটি ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডিং, কুয়েত পেট্রোলিয়াম করপোরেশন, মালয়েশিয়ার পেটকো ট্রেডিং লাবুয়ান কম্পানি ও ভারতের নুমালিগড় রিফাইনারি। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক দরপত্র প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তেল সরবরাহ করছে আরো চারটি কম্পানি—ভিটল এশিয়া, ইউনিপেক, ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন ও পেট্রো চায়না ইন্টারন্যাশনাল।
বিপিসির চেয়ারম্যান (সচিব) মো. আমিন উল আহসান বলেন, চার মাস আগেও ৫০০ থেকে ৬০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বকেয়া আটকে ছিল। কিন্তু আমরা তেল সরবরাহকারী কম্পানির বকেয়া শূন্যে নামিয়ে এনেছি। বকেয়া আটকে থাকায় দেশের সম্পর্কে ভুল ধারণা জন্মেছিল বিদেশি কম্পানিগুলোর কাছে। তাদের ধারণা ছিল, বাংলাদেশে এলসি খোলা হলেও টাকা পাওয়া যায় না। এখন তেল সরবরাহকারী বিদেশি কোম্পানিগুলো অনেকটা নিশ্চিতভাবেই সাশ্রয়ী দরে নিরবচ্ছিন্ন তেল সরবরাহ করবে। বর্তমানে রেমিট্যান্সপ্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকারির পাশাপাশি বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এলসি খুলে দ্রুত সময়ের মধ্যে বকেয়া বিল পরিশোধ করা হয়েছে।
চার মাসে ৪২ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয়ের বিষয়ে আমিন উল আহসান বলেন, আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড নিয়মের চেয়ে আমাদের জিটুজি পদ্ধতিতে প্রিমিয়াম প্রাইস এক থেকে দুই ডলার বেশি ছিল। আমরা নেগোসিয়েশন করে মাত্র চার মাসে প্রায় ৪২ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করেছি। আগামী বছর নেগোসিয়েশন করে জিটুজিতে প্রিমিয়াম প্রাইস আরো কমিয়ে ডলার সাশ্রয় করা সম্ভব হবে।
বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বছরে জ্বালানি তেলের চাহিদা প্রায় ৭২ লাখ মেট্রিক টন। মোট চাহিদার প্রায় ৫০ লাখ মেট্রিক টন ডিজেলই ব্যবহৃত হয়। বাকিটুকু চাহিদা পূরণ হয় পেট্রল, অকটেন, কেরোসিন, জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েলসহ বিভিন্ন জ্বালানি তেলে।
সম্পাদক: মো: রবিউল হক। প্রকাশক: মো: আশ্রাফ উদ্দিন ।
প্রকাশক কর্তৃক বি এস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২, টয়েনবি সার্কুলার রোড (মামুন ম্যানশন, গ্রাউন্ড ফ্লোর), থানা-ওয়ারী, ঢাকা -১২০৩ থেকে মুদ্রিত
দেলোয়ার কমপ্লেক্স, ২৬ শহীদ নজরুল ইসলাম সড়ক (হাটখোলা), ওয়ারী, ঢাকা -১২০৩ থেকে প্রকাশিত ।
মোবাইল: ০১৭৯৮৬৫৫৫৫৫, ০১৭১২৪৬৮৬৫৪
ওয়েবসাইট : dailyjanadarpan.com , ই-পেপার : epaper.dailyjanadarpan.com
Copyright © 2024 Daily Janadarpan. All rights reserved.