চট্টগ্রাম টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ইনিংস ও ২৭৩ রানের বিশাল ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে সফরকারীদের করা ৫৭৫ রানের বিপরীতে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ১৫৯ রানে অলআউট হয় নাজমুল শান্তর দল। এতে ফলো-অনে পড়ে স্বাগতিকরা। ৪১৬ রানে পিছিয়ে থেকে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসেও খেই হারায় বাংলাদেশের ব্যাটাররা। প্রথম ইনিংসের চেয়েও বাজে ব্যাটিং বিপর্যয়ের কবলে পড়ে স্বাগতিক শিবির। দ্বিতীয় ইনিংসে ১৪৩ রানে অলআউট হলে বিশাল হারের মুখ দেখার পাশাপাশি ২-০ ব্যবধানে সিরিজ হারে শান্ত-মুমিনুল-মুশফিকরা।
টেস্টের তৃতীয় দিনেই লজ্জার পরাজয় দেখতে হল বাংলাদেশের। ম্যাচের প্রথম দিনে সফরকারীদের ব্যাটিং দেখে সদ্য নিযুক্ত কোচ ফিল সিমন্স আশার বাণী শুনিয়েছিলেন। বলেছিলেন এই পিচে স্বাগতিকরাও ভালো রান তুলতে পারবে। কিন্তু কোচের সেই বক্তব্য মাঠে যেন বুমেরাং হয়ে ফিরে এলো উল্টোভাবে।
তৃতীয় দিনের শুরুতেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে ৪৮ রানে ৮ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এরপর অবশ্য মুমিনুল-তাইজুল জুটিতে দারুণ এক প্রতিরোধ গড়ে তোলে তারা।
দিনের লাঞ্চের পরপরই প্রথম ইনিংসে ১৫৯ রানে অলআউট হয়ে ফলোঅনে পড়লে, প্রথম ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকার চেয়ে ৪১৬ রানে পিছিয়ে থেকে আবারও ব্যাটিং নামে শান্তরা।
আগের দিনের ৩৮ রানের ৪ উইকেট নিয়ে খেলতে নিয়ে তৃতীয় দিনের শুরুতে ফের খেই হারায় নাজমুল শান্তর দল। স্কোর বোর্ডে ১০ রান যোগ হতেই বিদায় নেয় আরও ৪ ব্যাটার। দলীয় ৪৬ রানের পর স্কোর বোর্ডে ২ রানের মাঝে সাজঘরে ফেরেন শান্ত, মুশফিক মিরাজ ও অঙ্কন। এর মাঝে রাবাদা একাই নেন ৩ উইকেট।
অধিনায়ক নাজমুল শান্তকে বিদায় করে দিয়ে বাংলাদেশের মিডল অর্ডারে প্রথম আঘাত হানেন রাবাদা। ব্যক্তিগত ৯ ও দলীয় ৪৬ রানে সাজঘরে ফেরেন তিনি। এরপর ডাক মেরে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন মুশফিক। পিটারসনের বলে জর্জির তালুবন্দি হন তিনি। এরপর মিরাজ-অঙ্কন দুজনকেই বিদায় করেন রাবাদা। অভিষিক্ত অঙ্কন ফেরেন শূন্য রানে।
অঙ্কনের বিদায়ের পর ক্রিজে আসেন তাইজুল। তাকে সঙ্গে নিয়ে বড় জুটি গড়েন মুমিনুল হক। অর্ধশতক তুলে নেন মুমিনুল হক।
৮ উইকেটে ১৩৭ রান নিয়ে লাঞ্চের পর নেমে আরও ১৪ রান যোগ করে ফেরেন মুমিনুল। মুথুসামির বলে এলবিডব্লিউ হয়ে তার ৮১ রানের ইনিংস সমাপ্ত হয়। এরপর নবম উইকেটে ১০৩ রানের জুটি গড়া তাইজুলও দ্রুত ফিরে যান। কেশব মহারাজকে তার বলেই ক্যাচ দিয়ে ৩০ রানে থামেন তিনি। শেষ হয় বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস।
প্রথম ইনিংসে ফলো-অনে পড়ার পর নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং শুরু করে নাজমুল শান্তর দল। তবে গল্প এখানেও পাল্টায়নি। আগের মতোই বাংলাদেশের টপ অর্ডার যেন তাসের ঘর। চা-বিরতির আগে দলীয় ৪৩ রানেই নেই ৪ ব্যাটার।
ইনিংসের শুরুতেই ৪১৬ রানের পিছিয়ে থাকা। ম্যাচে ইনিংস হার যেন উঁকি দিচ্ছে। এদিকে তৃতীয় দিনের অর্ধেক পেরিয়েছে। এর অর্থ হলো ম্যাচের অর্ধেক এখনও বাকি। তাই বুঝেশুনে ব্যাট চালানোটাই মুখ্য। কিন্তু, হিতে বিপরীত। সেই আগের ইনিংসের মতোই সাজঘরে ফেরার প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেল ব্যাটারদের মধ্যে।
মুথুসামির জোড়া আঘাতের পাশাপাশি একটি করে উইকেট তুলে নেন মহারাজ ও পিটারসন। সাদমান ইসলামকে বিদায় করে এর শুরুটা করেন পিটারসন। আরেক ওপেনার জয়কে প্যাভিলিয়নে ফেরান মুথুসামি। প্রথম ইনিংসে দলের ভরসা হয়ে ওঠা মুমিনুলের ব্যাট হাসেনি এবার। শূন্য রানে সাজঘরে ফেরেন তিনি। চা-বিরতির আগে বাংলাদেশ শিবিরে শেষ আঘাত হানেন মুথুসামি। জাকের আলীকে বিদায় করেন তিনি।
দিনের শেষ সেশনে পরাজয়ের আনুষ্ঠানিকতাই বাকি ছিলো শুধু। শান্তর ৩৬, অঙ্কনের ২৯ ও হাসান মাহমুদের অপরাজিত ৩৮ ছাড়া তেমন কেউই বলার মত স্কোর করতে পারে নি। এক অঙ্কের রানে বিদায় নিয়েছেন দলের সাত ব্যাটার।
দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে কেশব মহারাজ একাই তুলে নেন পাঁচ উইকেট। ৪টি উইকেট পান মুথুসামি।