নিজস্ব প্রতিবেদক
অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে আগামী বুধবার থেকে সারা দেশে যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। গত রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেওয়া আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। একই সঙ্গে স্থগিত হওয়া লাইসেন্সের গোলাবারুদসহ আগ্নেয়াস্ত্র আগামী ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দেওয়ারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
গত ২৫ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বিগত ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য দেওয়া সব আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স (কর্মরত সামরিক-অসামরিক কর্মকর্তা ছাড়া) স্থগিত করা হলো। তাদের আগামী ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে গোলাবারুদসহ আগ্নেয়াস্ত্র সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো। ‘দ্য আর্মস অ্যাক্ট, ১৮৭৮’ এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা ‘আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও ব্যবহার নীতিমালা, ২০১৬’ অনুযায়ী জেলা ম্যাজিস্ট্রেট প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলেও প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সারা দেশে বিভিন্ন থানায় অগ্নিসংযোগ ও হামলা করে দুর্বৃত্তরা। এরপর লুট করা হয় অস্ত্র ও গোলাবারুদ। গতকাল রবিবার পর্যন্ত ৩ হাজার ৮৮০টি বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া ২ লাখ ৮৬ হাজার ৩৫৩ রাউন্ড গুলি, ২২ হাজার ২০১টি টিয়ার শেল ও ২ হাজার ১৩৯টি সাউন্ড গ্রেনেড উদ্ধার করা হয়েছে। তবে লুট হওয়া অস্ত্রের এখনো অর্ধেকও উদ্ধার হয়নি। এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদও ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জমা দেওয়ার সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সারা দেশে বিভিন্ন থানা ও ফাঁড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ সময় অনেক থানা থেকে অস্ত্র-গোলাবারুদ লুট করে নেয় উচ্ছৃঙ্খল জনতা। সারা দেশের থানা ও ফাঁড়িতে হামলার পর লুট হওয়া অস্ত্র-গোলাবারুদ ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জমা না দিলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। গত মঙ্গলবার পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
এছাড়া গণভবনের দায়িত্বে থাকা এসএসএফ সদস্যদের বিভিন্ন ধরনের ট্যাক্টিক্যাল গিয়ার, অস্ত্র, গোলাবারুদ, সাজসরঞ্জাম, বেতার যোগাযোগ ও অপারেশনাল সরঞ্জামাদির মজুত ছিল। কিন্তু হাতে সময় একদমই না থাকায়, এসব ফেলে শুধু নিজেদের সঙ্গে থাকা ছোট আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে বিভিন্নভাবে গণভবন থেকে সংসদ ভবনে গিয়ে প্রাণরক্ষার চেষ্টা করেন তারা। জনতা যখন সংসদ ভবনেও ঢুকে পড়ে, তখন এসএসএফ সদস্যরা দ্রুত নিজেদের অস্ত্র ও পোশাক খুলে সংসদ ভবনের ভল্টে রেখে সাধারণ পোশাকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে মিশে প্রাণরক্ষা করেন। পরবর্তীকালে পরিদর্শন করে গণভবন ও সংসদ ভবনে থাকা ভল্টগুলো আর পাওয়া যায়নি, যা আন্দোলনকারী বেশে দুষ্কৃতকারীরা নিয়ে গেছে বলে মনে করছে এসএসএফ।
তাদের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, বিভিন্ন ধরনের অপারেশনাল সরঞ্জাম যেমন অত্যাধুনিক অ্যাসল্ট রাইফেল, স্নাইপার রাইফেল, ফ্ল্যাশব্যাং গ্রেনেড, অ্যান্টি-ড্রোন সিস্টেম, বেতার যোগাযোগের ডিভাইস ও বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ, যার মূল্য ৫ কোটি টাকারও বেশি। সে দিন গণভবন ও সংসদ থেকে লুট হয়েছে এবং নষ্ট করা হয়েছে। ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে এসএসএফের অস্ত্র, গোলাবারুদ, অপারেশনাল সরঞ্জামাদি ও বিবিধ দ্রবাদির ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করতে সংস্থাটি তিনটি তদন্ত পর্ষদ গঠন করে। এসব পর্ষদ ইতিমধ্যে গণভবন ও সংসদ ভবন সরেজমিন পরিদর্শন করে বিভিন্ন অস্ত্র, সরঞ্জাম ও দ্রব্যাদি ইস্যু সংখ্যার সঙ্গে বর্তমান সংখ্যা যাচাই করেছে।
ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক হিসাব করে সংস্থাটি বলেছে, ৫ আগস্টের ঘটনায় এসএসএফের বিভিন্ন অস্ত্র ও দ্রব্য লুট ও ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ ৫ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে অস্ত্র ও ম্যাগাজিনের ক্ষতি ১১ লাখ ৬২ হাজার টাকা; গোলাবারুদ ও গ্রেনেড খোয়া যাওয়ায় ক্ষতি ১১ লাখ ৪৪ হাজার টাকা; যোগাযোগ ও অপারেশনাল সরঞ্জামাদি বাবদ ক্ষতি প্রায় ২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা; আইটি ও গোয়েন্দা সরঞ্জামাদি বাবদ ক্ষতি প্রায় ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা, যানবাহনে ক্ষতি প্রায় ১৪ লাখ টাকা এবং অন্যান্য দ্রব্যাদিতে ক্ষতি প্রায় ৭৪ লাখ টাকা।
গণভবনে এসএসএফের স্থাপিত অপারেশন রুমে অস্ত্র ও গোলাবারুদ রাখার জন্য দুটি অত্যাধুনিক ভল্ট স্থায়ীভাবে স্থাপন করা ছিল, যার প্রতিটির ওজন ১০০ কেজি। একটি ভল্টে দুটি এসএমজি টি-৫৬ রাইফেল ছিল এবং অপর ভল্টে ৯ হাজার ৪৯৮ রাউন্ড তাজা গুলি ছিল। লুটপাট চলাকালীন আন্দোলনকারী বেশে দুর্বৃত্তকারীরা ওই ভল্ট দুটি নিয়ে চলে যায়। পরবর্তীকালে সংসদ ভবন পরিদর্শনকালে ঐ ভল্টটি পাওয়া যায়নি বিধায় ঐ অস্ত্র ও গোলাবারুদ আন্দোলনকারী বেশে দুষ্কৃতকারীরা নিয়ে গেছে বলে প্রতীয়মান হয়। এছাড়া, গণভবনের ছাদে দুটি অ্যান্টি ড্রোন গান এবং একটি অ্যান্টি ড্রোন সিস্টেম মোতায়েন করা ছিল। অভ্যুত্থানকারীরা গণভবনে ঢুকে পড়লে সময় স্বল্পতার কারণে এসএসএফ সদস্যরা এগুলো খুলে সরাতে পারেননি, যা দুষ্কৃতকারীরা নিয়ে গেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
সম্পাদক: মো: রবিউল হক। প্রকাশক: মো: আশ্রাফ উদ্দিন । প্রকাশক কর্তৃক বি এস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২, টয়েনবি সার্কুলার রোড (মামুন ম্যানশন, গ্রাউন্ড ফ্লোর), থানা-ওয়ারী, ঢাকা -১২০৩ থেকে মুদ্রিত দেলোয়ার কমপ্লেক্স, ২৬ শহীদ নজরুল ইসলাম সড়ক (হাটখোলা), ওয়ারী, ঢাকা -১২০৩ থেকে প্রকাশিত । মোবাইল: ০১৭৯৮৬৫৫৫৫৫, ০১৭১২৪৬৮৬৫৪ ওয়েবসাইট : dailyjanadarpan.com , ই-পেপার : epaper.dailyjanadarpan.com