নবাগত পুলিশ সুপারের কাছে নারায়ণগঞ্জবাসীর প্রত্যাশা
প্রকাশের তারিখঃ ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
স্টাফ রিপোর্টার
বাংলাদেশ পুলিশ এক ঐতিহ্যনির্ভর বাহিনীর নাম। যারা দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত। বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশের ২ লক্ষাধিকেরও বেশি জনবল রয়েছে।দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি জমিজমার বিরোধ, ফৌজদারি মামলা, বিভিন্ন ধরনের মুকদ্দমাসহ, দেশের সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব রয়েছে সুবিশাল এ বাহিনীর হাতে। একটা কথা আছে, পুলিশ জনগণের বন্ধু। কথাটা নীতিবাক্য হলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন কতটুকু সেটা নিয়ে সন্দেহ আছে। বাস্তবতার নিরিখে একটা কথা বলতেই হয়, পুলিশকে মানুষ খুব ভয় পায়। যে-কোনো ব্যাপারে কোনো বিষয় নিয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হওয়ার কথা থাকলেও মানুষ খুব বিপদে না পড়লে পুলিশের কাছে যায় না। কোনো ব্যাপারে শত চেষ্টা করেও যখন কোনো সুন্দর সুরাহা করতে পারে না তখনই থানায় যায়। পুলিশ বাহিনীকে নিয়ে নেতিবাচক মনোভাবের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মনে নানা নেতিবাচক মনোভাবও রয়েছে। আওয়ামীলীগের ১৬ বছরের স্বৈরাচারী শাসন ও এ বাহিনীতে ব্যাপক দলীয় করণের ফলে পুলিশ বাহিনীর দীর্ঘদিনের সুনাম ধুলিস্যাৎ হয়ে যায়। বিশেষ করে কোটা আন্দোলনকে ঘিরে সারাদেশব্যাপী এ বাহিনীর ওপর ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনা ঘটে। যার মূল কারণ মানুষের দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত ক্ষোভ। এবার আসা যাক, নারায়ণগঞ্জের প্রসঙ্গে। নারায়ণগঞ্জ বিট্রিশ ঔপোনিবেষিক সময় থেকে ব্যবসা-বাণিজ্যের তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিত। আর এটাকে পুঁজি করে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের মাধ্যমে পুরো নারায়ণগঞ্জবাসীকে কব্জা করা একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। আওয়ামী লীগের জনপ্রতিনিধিদের আশকারায় সেই সিন্ডিকেট সবকিছুকেই ধরাকে সরাজ্ঞান বলে মনে করতে থাকে। অপরাধীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয় নারায়ণগঞ্জ। মেধাবী ছাত্র ত্বকী হত্যা, সাত খুন সহ অসংখ্য ঘটনায় প্রতিনিয়ত শিরোনাম হয় নারায়ণগঞ্জ। এদিকে গত ৩০ আগষ্ট শুক্রবার নারায়ণগঞ্জে নতুন পুলিশ সুপার হিসেবে যোগ দিয়েছেন প্রত্যুষ কুমার মজুমদার। এর আগে, প্রত্যুষ কুমার মজুমদার তিনি ২৫তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ন হন। তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ মিরপুর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ভারপ্রাপ্ত) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সন্ত্রাস, মাদক, চাঁদাবাজি, ভূমিদস্যূতা যেখানে জেলার রন্ধে রন্ধে সেখানে নারায়ণগঞ্জবাসীর আস্থার বিশাল অংশটুকু অর্জন করতে পারবেন কি জেলার নবাগত সুযোগ্য পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার এখন সে প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে জেলাবাসীর মনে। এ বিষয়ে কথা হলে নগরবাসীর প্রায় সকলেই একই সুরে জানান, পুলিশ সাধারণ মানুষের বন্ধু। আর এই কথাটাকে বাস্তবে রূপ দিতে হবে। জনমনে পুলিশ সম্পর্কে যে নেতিবাচক মনোভাব আছে সেটা দূর করতে হবে। তা দূর করতে হলে সঠিকভাবে তদন্ত করে দোষীদের বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। কিছু থানায় অসৎ অফিসার কর্তৃক মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়া, যানবাহন, দোকানে চাঁদাবাজি, থানার দ্বারস্থ হওয়া সাধারণ মানুষের টাকা হাতিয়ে নেওয়া, তদন্ত করতে এসে বিশাল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়াসহ বিভিন্ন অপকর্মের জন্য পুলিশের হাজারো সুনাম মাটিতে মিশে যাচ্ছে। মুষ্টিমেয় অসাধু লোকদের শায়েস্তা করলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। পুলিশের হাজারো ভালো কাজের দ্বারা অর্জিত সম্মান কিছু লোকের অসাধুতার জন্য নষ্ট হোক সেটা কাম্য নয়। বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী আমাদের গর্ব। দেশের সব সুখ-দুঃখের অংশীদার। আমজনতার নিরাপত্তার পাহারাদার। তারা আমাদের মতো সাধারণ জনতার মধ্যে কারো না কারো ভাই ভাতিজা। সারারাত জেগে তারা সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। পুলিশের প্রতি আমজনতার সম্মান অক্ষুণ্ন রাখতেই অসাধু লোকদের শায়েস্তা করা অতি প্রয়োজনীয়। আবার বিভিন্ন থানায় বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের প্রভাব লক্ষণীয়। অবৈধ প্রভাব খাটানো বন্ধ করতে হবে। নবাগত পুলিশ সুপারের কাছে আমাদের এ প্রত্যাশা থাকবে তিনি যেনো সকলের জন্য একটি সুন্দর বাসযোগ্য জেলা আমাদেরকে উপহার দেন। যে জেলার নাম শুনলে আর মানুষের মনে ভয় কাজ করবে না। সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি বলেন, ছাত্র জনতার অভুত্থানে শহীদদের রক্তের দিকে তাকিয়ে মাফিয়াদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নারায়ণগঞ্জে ওসমান পরিবারের নেতৃত্বে মাফিয়াচক্র তৈরি হয়েছিল। মাফিয়া, গডফাদারদের বহাল রেখে রাষ্ট্র সংস্কার সম্ভব না। অতিদ্রুত এদের গ্রেপ্তার করতে হবে এবং তাদের সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে হবে। পুলিশকে জনবান্ধব হতে হবে। সাধারণ মানুষের পাশে থেকে কাজ করতে হবে। এদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলার নবাগত পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নারায়ণগঞ্জ জেলাবাসীর প্রত্যাশা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করবে জেলা পুলিশ। মাদক, সন্ত্রাস নির্মূলে পুলিশের যে নিরন্তর চেষ্টা সেটি অব্যাহত থাকবে। সমাজে যে বৈষম্য অনিয়মগুলো আছে তা নিরসনে সকলের সহযোগিতায় কাজ করবো। সোমবার সকালে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় জেলার আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে নিজের মতামত তুলে ধরার কথাও জানান তিনি।
সম্পাদক: মো: রবিউল হক। প্রকাশক: মো: আশ্রাফ উদ্দিন । প্রকাশক কর্তৃক বি এস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২, টয়েনবি সার্কুলার রোড (মামুন ম্যানশন, গ্রাউন্ড ফ্লোর), থানা-ওয়ারী, ঢাকা -১২০৩ থেকে মুদ্রিত দেলোয়ার কমপ্লেক্স, ২৬ শহীদ নজরুল ইসলাম সড়ক (হাটখোলা), ওয়ারী, ঢাকা -১২০৩ থেকে প্রকাশিত । মোবাইল: ০১৭৯৮৬৫৫৫৫৫, ০১৭১২৪৬৮৬৫৪ ওয়েবসাইট : dailyjanadarpan.com , ই-পেপার : epaper.dailyjanadarpan.com