আজ
|| ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ১৯শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
দুর্যোগ আল্লাহর পরীক্ষা, চাই ধৈর্য ও সহযোগিতা
প্রকাশের তারিখঃ ৩০ আগস্ট, ২০২৪
ডেস্ক রিপোর্ট
আল্লাহ তাআলা বিভিন্ন সময় নানা বিপদ-আপদ ও বালা–মসিবতের মাধ্যমে মানুষের ইমান, আমল ও নির্ভয়তার পরীক্ষা নেন।
কোরআন মাজিদে আছে, ‘আর আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জানমাল ও ফল–ফলাদির ক্ষতির মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও, যারা নিজেদের বিপদের সময় বলে “নিশ্চয় আমরা আল্লাহর এবং নিশ্চয় আমরা আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তনকারী”; তাদের ওপরই রয়েছে তাদের রবের পক্ষ থেকে ক্ষমা ও করুণা এবং তারাই হিদায়াতপ্রাপ্ত।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৫৫-১৫৭)।
নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণে পৃথিবী ভারাক্রান্ত হলে; প্রাকৃতিক দুর্যোগ তথা ঝড়, ভারী বর্ষণ, সাইক্লোন, শিলাবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি-খরা-শুষ্কতা, প্রবল বাতাস, ভূমিকম্প, সাগরের পানি বিপৎসীমায় পৌঁছে যাওয়া, নদ-নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করা, দুর্ভিক্ষ, মহামারি, অগ্নিকাণ্ড, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, শৈত্যপ্রবাহ, দাবদাহ, অগ্ন্যুৎপাত, লাভা উদ্গিরণ, সম্পদহানি, প্রাণহানি, বরকতশূন্যতা, ক্ষতির প্রাবল্য প্রভৃতি দেখা দেয়।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘মানুষের কৃতকর্মের কারণে স্থলে ও সমুদ্রে বিপর্যয় প্রকাশ পায়। যার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা তাদের কিছু কৃতকর্মের স্বাদ তাদের আস্বাদন করান, যাতে তারা (সুপথে) ফিরে আসে।’ (সুরা-৩০ রুম, আয়াত: ৪১)
‘তোমাদের ওপর যেসব বিপদ–আপদ আপতিত হয়, তা তোমাদেরই কর্মফল। তিনি অনেক গুনাহ মাফ করে দেন।’ (সুরা-৪২ শূরা, আয়াত: ৩০)
‘আর কী ব্যাপার! যখন তোমাদের ওপর মসিবত এল, যার দ্বিগুণ (অপরাধ) তোমরা ঘটিয়েছ, তখন তোমরা বললে, “এটা কোত্থেকে এল!” (হে নবী!) আপনি বলে দিন, এ তো তোমাদের পাপ থেকেই; নিশ্চয় আল্লাহ সব বিষয়েই সর্বশক্তিমান।’ (সুরা-৩ আলে ইমরান, আয়াত: ১৬৫; তাফসিরে মাআরিফুল কোরআন, পৃষ্ঠা: ৬৭৫৩)
হাদিস শরিফে এসেছে, ‘যে মাপে কম দেবে, সে দুর্ভিক্ষ, মৃত্যুযন্ত্রণা এবং শাসক কর্তৃক জুলুমের শিকার হবে।’ ‘যে জাতির মধ্যে ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়ে; সেখানে (ক্রমাগত) অনাবৃষ্টি দেখা দেয়।’ ‘যখন অন্যায়–অনাচার, জিনা–ব্যভিচার বৃদ্ধি পায়, অন্যের হক ভূলুণ্ঠিত হতে থাকে, মাপে কম দেওয়া ও চোরাচালানি প্রভৃতির প্রাচুর্য হয়, তখন দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। আসমানি গজব বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ একের পর এক নামতে শুরু করে।’ (তাফসিরে রুহুল মাআনি: ১১/৭৩; তাফসিরে মাআরিফুল কোরআন: ৬/৭৫৩)
বিপদের সময় অনুতপ্ত হওয়া এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা সুন্নত। যতক্ষণ বান্দা তাওবা–ইস্তিগফার করতে থাকে, ততক্ষণ আল্লাহর আজাব আসে না।
তাই আমাদের বেশি বেশি তওবা–ইস্তিগফার করতে হবে এবং নির্দিষ্ট মাসনুন দোয়াগুলো পড়তে হবে।
‘প্রচণ্ড ঝোড়ো হাওয়া বইলে রাসুলুল্লাহ (সা.) মসজিদে যেতেন, আজান দিতেন ও নামাজে মশগুল হতেন।’ (মিশকাত: ৬৯৬ ও ৫৩৪৫)
বৃষ্টির সময় পড়ার দোয়া, ‘আল্লাহুম্মা ছাইয়েবান নাফিআ’ (হে আল্লাহ! উপকারী বৃষ্টি দিন)। (তিরমিজি)
ঝড়–তুফানের সময় পড়ার দোয়া, ‘আল্লাহুম্মা হাওয়ালাই না, ওয়া লা আলাইনা (হে আল্লাহ! আমাদের আশপাশে ফিরিয়ে নিন, আমাদের ওপর দেবেন না)।’ (মুসলিম ও তিরমিজি)
বজ্রপাতের সময় পড়ার দোয়া, ‘আল্লাহুম্মা লা তাকতুলনা বিআজাবিকা ওয়া লা তুহলিকনা বিগদাবিকা ওয়া আফিনা কাবলা জালিকা (হে আল্লাহ! আজাব ও গজব দিয়ে আমাদের ধ্বংস ও নিঃশেষ করে দেবেন না; তার আগেই আমাদের ক্ষমা করে দিন)।’ (আবু দাউদ)
আল্লাহর আজাব থেকে বাঁচার জন্য আমাদের দ্বীনের ওপর চলতে হবে; নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, দান–সদকা ইত্যাদি নেক আমল বেশি বেশি করতে হবে।
হাদিস শরিফে আছে, ‘যখন কোথাও ভূমিকম্প হয় অথবা সূর্যগ্রহণ হয়, ঝড়ে বাতাস বা বন্যা হয়; তখন মানুষের উচিত মহান আল্লাহর কাছে অতি দ্রুত তওবা করা, তার নিকট নিরাপত্তার জন্য দোয়া করা এবং মহান আল্লাহকে অধিক হারে স্মরণ করা এবং ক্ষমা প্রার্থনা করা।’
রাসুলুল্লাহ (সা.) নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘তোমরা দ্রুততার সঙ্গে মহান আল্লাহর জিকির করো, তার কাছে তওবা করো।’ (বুখারি: ২/৩০; মুসলিম: ২/৬২৮)
‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা ধৈর্যের সঙ্গে ও নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করো, নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৫৩)
আমাদের উচিত সামর্থ্য অনুযায়ী দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো ও সাহায্যের হাত প্রসারিত করা। হাদিস শরিফে আছে, ‘সদকা আল্লাহর অসন্তুষ্টিকে নিভিয়ে দেয় এবং অপমৃত্যু রোধ করে।’ (তিরমিজি: ৬০০)
সম্পাদক: মো: রবিউল হক। প্রকাশক: মো: আশ্রাফ উদ্দিন ।
প্রকাশক কর্তৃক বি এস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২, টয়েনবি সার্কুলার রোড (মামুন ম্যানশন, গ্রাউন্ড ফ্লোর), থানা-ওয়ারী, ঢাকা -১২০৩ থেকে মুদ্রিত
দেলোয়ার কমপ্লেক্স, ২৬ শহীদ নজরুল ইসলাম সড়ক (হাটখোলা), ওয়ারী, ঢাকা -১২০৩ থেকে প্রকাশিত ।
মোবাইল: ০১৭৯৮৬৫৫৫৫৫, ০১৭১২৪৬৮৬৫৪
ওয়েবসাইট : dailyjanadarpan.com , ই-পেপার : epaper.dailyjanadarpan.com
Copyright © 2024 Daily Janadarpan. All rights reserved.