জেলা প্রতিনিধি সিলেট
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশে নির্বাচনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে একটা যৌক্তিক সময় দেওয়া হবে। তবে অনির্দিষ্ট সময় দেওয়া যায় না। রোববার (২৫ আগস্ট) সিলেটে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন।
ফখরুল বলেন, রাষ্ট্রের দীর্ঘ দিনের জঞ্জাল সংস্কারের কাজ চলছে। সংস্কারের জন্য বেশি সময় লাগার কথা নয়। যেমন নির্বাচন কমিশনকে ঠিক করতে হবে, প্রশাসনকে সংস্কার করতে হবে। আমরা লতিফুর রহমানের সরকার দেখেছি। তিন মাসের মধ্যে সব ঠিক করে দিয়েছে। এটা খুব কঠিন কাজ না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এটা সত্য আওয়ামী লীগ এতো গভীরে গেছে, এটার মূল্যৎপাটন করতে হলে অন্তত ১০ বছর লাগবে। কিন্তু জাতি তো ১০ বছর অপেক্ষা করবে না। জনগণের প্রতিনিধির মাধ্যমেই সংস্কার করতে হবে। এজন্য পার্লামেন্টে যেতে হবে। একটা সুষ্ঠু কার্যকরি পার্লামেন্ট না থাকলে, জবাবদিহীতা না থাকলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে না। আমরা এ সরকারকে সময় দিতে চাই। আমরা সরকারকে সহযোগিতা করবো। তবে রাজনৈতিক দলগুলোকে আস্থার মধ্যে নিয়ে কথা বলতে হবে, সংলাপ করতে হবে। তা না হলে গণতন্ত্র ফিরবে না।
শেখ হাসিনার পতন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে যে শেখ মুজিবুর রহমানের নাম জড়িত, সেই ব্যক্তির মেয়ে শেখ হাসিনার এই করুণ পরিণতির জন্য আমার খুব কষ্ট হয়। তার পতনের মূল কারণ হলো ক্ষমতার লোভ, দাম্ভিকতা আর দুর্নীতি। বিএনপির আন্দোলন সংগ্রাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই আন্দোলন শুরু হয়েছে ২০১২ সালে। আওয়ামী লীগ তিনটি নির্বাচনে রাষ্ট্র যন্ত্রকে ব্যবহার করে ক্ষমতা দখল করে রাখে। তখন থেকেই দল অস্থিতিশীল। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর তথ্য হলো আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রের সবগুলো প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে। প্রশাসন-পুলিশ একদম ভেঙে শেষ করে ফেলেছে। অন্যান্য সেক্টরেও ভঙ্গুর অবস্থা। অর্থনীতিকে অকল্পনীয়ভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে। এক কথায় সব শেষ করে দিয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আগে কেউ কথা বলতে ১০ বার চিন্তা করতো, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে ধরা খাবো কী না, পুলিশ এসে ধরে নিয়ে যায় কী না। সেখান থেকে আমরা বেরিয়ে এসেছি। মানুষ আজ নতুন করে জেগে ওঠেছে। ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ইলিয়াস আলীর সন্ধানের জন্য আমরা অনেক আন্দোলন করেছি। বিভিন্ন জায়গায় দলের পক্ষ থেকে চিঠি দিয়েছি। জাতিসংঘ থেকে একটি মানবাধিকার সংগঠন এসেছে। তারা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংগঠিত হত্যাকাণ্ড-গুম নিয়ে তদন্ত করছে। আমরা আশাবাদি একটা খবর পাবো।
মতবিনিময় সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী, ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ও মহানগর শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মিফতাহ সিদ্দিকী, সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী, জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ূম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আকাশ পথে মির্জা ফখরুল সিলেটে আসেন। পরে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে হযরত শাহজালাল ও শাহপরান (রা.)-এর মাজার জিয়ারত করেন। সফরকালে বিএনপি মহাসচিবের সহধর্মিণীও সঙ্গে ছিলেন।