আজ সোমবার, ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

।। এবিএম সোহেল রশিদ।।
.

কুঁড়েঘরের বারোয়ারি তৈজসপত্র কিংবা আনাজপাতি
শীতলপাটি, নকশিকাঁথা, ফুলতোলা বালিশের খোল
অথবা প্রেমিক বাতাসের উৎসমূল, হাতপাখা;
আমাকে আর শীতল করে না
.
পুকুরঘাটে মেলারমাঠে, দুপুরের অনাহুত দৌড়ঝাঁপ
হলুদবিকেলে আঙিনায় বেরসিকবৃষ্টির টাপুরটুপুর নৃত্য
খোলাজানালায় আনাড়ি জোছনার ফিসফাস কথোপকথন
আমাকে বরং ভাবতে শেখায়
.
ধারালো তলোয়ারের চকচকে আভায় শানিত
সোনালী দেহের চৌম্বক, এলোমেলো চুল
হরিণচোখের ইশারা, গোলাপি ঠোঁটের ঠিকানা
আমাকে আর প্লাবিত করে না
.
ভালোবাসার আঁচলে ক্লান্তমুখুর দিনের আশ্রয়
মাটিরকলস থেকে নেয়া আঁজলা ভরা পানি
বাড়িয়ে ধরা বড়ুইভর্তা কিংবা আম-কাসুন্দি
আমার ভিতরটাকে বরং নাড়ায়
.
বিদেশী সংস্কৃতির হামাগুড়িতে নড়বড়ে অস্তিত্ব শিকড়
তল্লাটজুড়ে চাই বীরবাঙালীর হাজার বছরের ঐতিহ্য
অপসংস্কৃতির এই প্রাচীর ভেঙে করবো চৌচির
চাই অসাম্প্রদায়িক সহবস্থানের সেইসব গৌরবময় দিন
উৎসব-পার্বনের আনন্দঢেউয়ে হাসবো সবাই আগের মতোই
প্রতিটি বাঁকে সাহস যোগাবে আত্মত্যাগী জাতীয়বীর
.
আচ্ছা, রক্তেকেনা সংবিধানে সংযোজন হবে কি
আমাদেরজন্য একটি কাব্যিক অধিকারের আইন
ভাবনার চিত্রকল্পগুলি নিজস্ব শৈল্পিক বিন্যাসে
ও বুদ্ধিদীপ্ত পরিকল্পনার দ্যুতি ছড়াবে কি সংসদচুড়ায়
.
প্রতিবেশীরাষ্ট্র ভ্রাতৃত্ববন্ধনে করবে কাঁটাতারের সমাধান
উদ্যানের জনরোষ ছিড়বে স্বৈরাচারের পোশাক
সৃষ্টিশীলদের হাতেই ন্যস্ত হবে ক্ষমতাদণ্ড
শান্তিবার্তা বইবে কবিতার মতো কেউ
এই সবুজমৃত্তিকায় শোনা যাবে একদিন
রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের কণ্ঠস্বর; নান্দনিক কথামালায়
.
কবিতারমতো ছন্দবদ্ধ হবে আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্র
সুন্দরের আয়োজনে চালবে সামরিক প্রশিক্ষণ
রাস্তার মোড়ে পুলিশ বিলোবে লালগোলাপ
থামাবে মোসাহেবি প্রলাপ, মুকুলিত সৌরভে
আমদানি হবে না আর বিজাতীয় সংস্কৃতি
কলকাঠি নাড়াবে না আর বিদেশী রাজনীতি
রপ্তানি হবে আমার বর্ণমালায় ছাপানো বই
আমার বর্ণমালা অঙ্কিত যাবতীয় পন্য
সমৃদ্ধ হবে বাংলা ভাষাভাষীর প্রবাস
.
প্রাধান্য পাবে বাহান্ন আর একাত্তর
কবিতার মিছিলে ছন্দ ভরা স্লোগানে
সমস্ত অশুভ শক্তির চিহ্নিত ষড়যন্ত্রকারীকে
দ্রোহের পঙক্তিমালা সহজেই করবে গ্রাস
,
এ কথা এখন আকাশের মতো পরিষ্কার
যে কবিতা বোঝে না, সে রাষ্ট্র ও রাজনীতি বোঝে না
যে কবিতা আবৃতি জানে না তার বক্তৃতা অন্তঃসারশূন্য
যে কবিতা পছন্দ করে না সে মানবতাহীন মানুষ
যে কবিতা শোনে না সে যুদ্ধবাজ স্বৈরাচার
যে কবিতা লিখে না, তার হাতে শিক্ষা ব্যবস্থা
নকলের গোশালা, ছাত্র-ছাত্রীরা দিকশূন্য যাত্রী
কবিরা হলেন সুন্দর পথের অভিযাত্রী
.
রাষ্ট্রযন্ত্র কোন মিথ্যেবাদীর জন্য নয়
কোন আত্মঅহংকারী স্বৈরাচারে জন্যও নয়
স্বঘোষিত কোন হত্যাকারীর জন্যও নয়
সেখানে থাকবে একদল কবিতার রাজপুত্র
স্বপ্নদ্রষ্টা এই সব কলমযোদ্ধাদের হাতেই
লিখিত হবে একদিন আগামীদিনের দিনলিপি
নির্ধারিত হবে বাংলাদেশ গড়ার নান্দনিকসূত্র

Exit mobile version