আজ
|| ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ২০শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
ব্রেন স্ট্রোক আসলে কী? কাদের বেশি হয়?
প্রকাশের তারিখঃ ২৬ এপ্রিল, ২০১৮
সাধারণ পর্যায়ে অনেকে ব্রেন স্ট্রোক আর হার্ট অ্যাটাককে একই বিষয় মনে করে গুলিয়ে ফেলেন। বাস্তবে কিন্তু তা নয়। আসুন প্রথমে জেনে নিই ব্রেন স্ট্রোকের লক্ষণগুলো কি কি-
• হাত-পায়ে অবশ ভাব
• জুতোর ফিতে বাঁধতে সমস্যা
• মুখের অসাড়তা, কথা জড়িয়ে যাওয়া
• বেসামাল হাঁটা-চলা
• ঘাড়ে-মাথায় যন্ত্রণা, বমি, সংজ্ঞা হারানো
স্ট্রোক বিষয়ে শারীরবিদদের ব্যাখ্যা : হৃদযন্ত্রের ধমনীতে রক্ত সরবরাহ ব্যাহত হলে হার্ট অ্যাটাক হয়। আর মস্তিষ্কে রক্তের জোগান কমলে হয় ব্রেন স্ট্রোক। কোনো ধমনী আচমকা ছিঁড়ে গেলে মস্তিষ্কে রক্তপাত হয়। এই 'সেরিব্রাল হেমারেজ'ই ব্রেন স্ট্রোকের অন্যতম কারণ।
কখনো দেখা যায় কোনো কারণে ধমনী সরু হয়ে মস্তিষ্কের কোনো অংশে রক্ত জমাট বেঁধে যায়। এর ফলেও ব্রেন স্ট্রোক হতে পারে, ডাক্তারি পরিভাষায় এর নাম 'সেরিব্রাল থ্রম্বোসিস'।
সেরিব্রাল হেমারেজ বা থ্রম্বোসিস- কোনোটাই কিন্তু একেবারে জানান না-দিয়ে আচম্বিতে আসে না। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, দুটি ক্ষেত্রেই বেশ ক'দিন আগে থেকে ধমনীতে রক্ত চলাচলে সমস্যা হয়। আর নিয়মিত রক্তচাপ মাপলেই ধরা পড়ে, শরীরের ভেতরে কোথাও না-কোথাও একটা সমস্যা হচ্ছে। তবে বিপদের সেই 'ইঙ্গিত'কে গুরুত্ব না-দেওয়ার প্রবণতাটাই চিকিৎসকদের বেশি ভাবাচ্ছে।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে রোগী, রোগীদের পরিজন ও অচিকিৎসক কর্মীদের ওপরে একটি 'স্ট্রোক সচেতনতা' সমীক্ষা চালিয়েছিলেন স্নায়ুরোগের চিকিৎসকেরা। দেখা গিয়েছে, ৬০%-৬৮% মানুষের ধারণা, স্ট্রোক হয় শুধু বুকে (অর্থাৎ হৃদযন্ত্রে) হয়। বুক ব্যথা করে। ওঁরা জানেনই না যে, এর সঙ্গে মস্তিষ্কেরও যোগাযোগ থাকতে পারে।
এ ছাড়া নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং বাঙুর ইনস্টিটিউট অফ নিউরোলজির নিউরোমেডিসিনের চিকিৎসকেরা পাঁচ বছর ধরে বারুইপুরের রামনগরে ২০ হাজার মানুষের ওপর সাধারণ স্নায়ুরোগ সম্পর্কে সমীক্ষা চালিয়েছিলেন। সমীক্ষকদের অন্যতম চিকিৎসক শঙ্করপ্রসাদ সাহার আক্ষেপ, 'স্ট্রোক জিনিসটা কী, সেটা কোথায়, কেন হয়, সে সম্পর্কে ওয়াকিবহাল মাত্র ২০%! স্ট্রোকের হার কমানোর পথে এটাই তো সবচেয়ে বড় বাধা।'
অপরদিকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ৯ হাজার স্ট্রোক-আক্রান্তকে নিয়ে সমীক্ষা চালিয়েছে 'স্ট্রোক ফাউন্ডেশন অব বেঙ্গল'। তাদের রিপোর্ট ইন্দোরে 'ইন্ডিয়ান স্ট্রোক অ্যাসোসিয়েশন কংগ্রেস'-এর বার্ষিক অধিবেশনে পেশ হয়েছে। সমীক্ষকদের অন্যতম চিকিৎসক দীপেশ মণ্ডল জানান, পশ্চিমবঙ্গে যাঁদের উচ্চ রক্তচাপ আছে, তাঁদের ৫০% সে সম্পর্কে জ্ঞাত নন। যাঁরা জানেন, তাঁদের অর্ধেক আবার চিকিৎসাই করান না, কিংবা নিয়মিত ওষুধ খান না। ফলে স্ট্রোক নিঃশব্দে থাবা বসায়।
স্ট্রোক সম্পর্কে মানুষের এ হেন 'অজ্ঞানতা'ই মৃত্যু ও পঙ্গুত্ব বাড়াচ্ছে বলে মনে করেন চিকিৎসক নিখিল বিশ্বাস। তিনি বলেন, 'আমাদের এখানে আচমকা কারো ঘাড়ে-হাতে যন্ত্রণা শুরু হলে লোকে ভেবে ফেলবে, শোওয়ার দোষ! মাথা ব্যথা করলে মনে করবে এসিড। হাত-পা ঝিনঝিন করে অবশ হতে লাগলে ভাববে বাত। কিছুতেই ভাবতে পারবে না যে, এগুলো স্ট্রোকেরও লক্ষণ হতে পারে!'
স্নায়ুরোগ-চিকিৎসক পরিমল ত্রিপাঠীর বক্তব্য, 'উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিস থাকলে নিয়মিত হেল্থ চেক-আপ জরুরি। কিন্তু এখানকার অধিকাংশ মানুষ উদাসীন। মধ্যবিত্তদের কাছে হেল্থ চেক-আপ মানে বিলাসিতা। অথচ এটা করলে ফি বছর প্রায় ১০ লাখ লোক স্ট্রোক এড়াতে পারেন।'
বস্তুত হু-র রিপোর্ট অনুযায়ী ব্রেন স্ট্রোকের আক্রমণ-হার এখন 'সিক্স-ইন-ওয়ান'। অর্থাৎ সারা বিশ্বে যেখানেই হোক, ছয়টি মানুষ যদি একত্রিত হন, দেখা যাবে, তাঁদের একজন না-একজন জীবনে কখনো না-কখনো এই রোগের কবলে পড়েছেন, বা পড়তে পারেন!
ধূমপান নিয়ে উদ্বেগজনক তথ্য
বিশেষজ্ঞদের মতে ধূমপান শুধু স্ট্রোকের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ তাই নয়, ধূমপায়ীদের কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি ২০০০ ভাগ, ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি ১২০০০ ভাগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি স্বাভাবিকের চেয়ে ৮ ভাগ বেশি বলে তথ্য দিয়েছেন। তবে আশার কথা হচ্ছে যাদের নীরব স্ট্রোক হয়েছে তারা যদি ধূমপান ছেড়ে দেন তবে স্ট্রোকের তীব্রতা কমতে সহায়ক হতে পারে।
আসুন জেনে নেই স্ট্রোক আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কাদের কাদের বেশি
• যাদের রক্তচাপ ১২০/৮০-এর চেয়ে বেশি
• ধূমপায়ী
• যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে এবং রাতে ঘুমের সমস্যা হয়। এ ছাড়া যাদের রক্তে হোমোসিসটিনের মাত্রা বেড়ে যায়।
• যাদের হিপের পরিমাপ কোমরের পরিমাপের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এবং রক্তে সি-রিঅ্যাকটিভ প্রোটিনের মাত্রা বেশি।
• যাদের দৈনিক ২০ মিনিট সাঁতার কাটা অথবা দৌঁড়ানোর অভ্যাস নেই।
• যারা মদ্যপান করেন।
• যাদের পিতা-মাতা বা ভাই-বোন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছেন।
• এমন ব্যক্তি যিনি মাসে একবারও মাছ খান সবজিও শস্যকণা কম আহার করেন এবং যিনি খাবারে বাড়তি লবণ খান।
• নিয়মিত দাঁতের যত্ন-পরিচর্যা করেন না।
• যারা মুক্ত বাতাসে ভ্রমণ করেন না। যাদের আলসার আছে। যারা অবিবাহিত। যারা বেশি হতাশায় ভোগেন এবং যারা রাগ-ক্রোধ সংবরণ করতে পারেন না।
এ বিষয়গুলো জানার পর দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে তৎপর হোন, যেসব প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা আপনার নিজের কাছেই আছে সেগুলো প্রয়োগ করুন আর প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এখানে কিছু টিপস দেওয়া হলো। স্ট্রোক প্রতিরোধে প্রয়োজনে অনুসরণ করুন।
• নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা
• চিকিৎসকের পরামর্শে নির্দেশিত ওষুধ-পথ্য নিয়মিত গ্রহণ
• নিয়ম করে হাঁটা
• দৈনিক খাদ্যাভ্যাসে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন
• ওজন নিয়ন্ত্রণ
সম্পাদক: মো: রবিউল হক। প্রকাশক: মো: আশ্রাফ উদ্দিন ।
প্রকাশক কর্তৃক বি এস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২, টয়েনবি সার্কুলার রোড (মামুন ম্যানশন, গ্রাউন্ড ফ্লোর), থানা-ওয়ারী, ঢাকা -১২০৩ থেকে মুদ্রিত
দেলোয়ার কমপ্লেক্স, ২৬ শহীদ নজরুল ইসলাম সড়ক (হাটখোলা), ওয়ারী, ঢাকা -১২০৩ থেকে প্রকাশিত ।
মোবাইল: ০১৭৯৮৬৫৫৫৫৫, ০১৭১২৪৬৮৬৫৪
ওয়েবসাইট : dailyjanadarpan.com , ই-পেপার : epaper.dailyjanadarpan.com
Copyright © 2024 Daily Janadarpan. All rights reserved.